Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, শনিবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৫,   বৈশাখ ৬ ১৪৩২

অধ্যাপক ডা. এস এম মোস্তফা জামান

প্রকাশিত: ১২:২৮, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২০
আপডেট: ২১:০০, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২০

কোদাইকানাল মায়াবী আলোয়ান

হৃদয়ের ভেতরে যত্নে রাখা বাউন্ডুলে মনটা বলে -চল ঘুরে আসি। কোথায় যাবি? এই করোনাকালে? চেনা চৌহদ্দির বাইরে প্রকৃতির স্নিগ্ধ রঙরূপের টানে ইচ্ছে হয় বেরিয়ে পড়ি আনন্দের সুলুকসন্ধানে। 

ভারতের তামিলনাড়ুর কোদাইকানালের এক বন্ধুর ফোনে আর মনভাসির টানে মন বলে কোথাও বেড়িয়ে আসি...।

ডোনা কতগুলো ছবি ওলটপালট করতে বেরিয়ে এলো কোদাইকানাল অ্যালবাম। ছবি দেখা আর স্মৃতির অবয়বে মনে পড়লো কোদাইকানালের দিনগুলো। বছর দুয়েক ও হয়নি ।

কোদাইকানাল মায়াবী আলোয়ানের মতো এখনো জড়িয়ে আছে। পাহাড়ি সবুজে ঢাকা, সোঁদা গন্ধ মাখা পাইন বন, কবিতার মতো উপত্যকা আকৃষ্ট করে আমাকে। রাস্তার পাশে সদ্য তোলা পাতাসমেত পাহাড়ী গাজর এবং অন্যান্য সবজি ফল দেখে আনন্দে মন ভরে ওঠে। সুন্দরতার আবেশ, মেঘের জলছবি, সবুজে নীল পাহাড় আবিষ্ট করে এখনো। কোদাইকানাল থেকে মাদুরাই পথে ফিরতে ফিরতে স্মৃতিতে ধরে রাখি ওই ঝিল, অস্থায়ী আবাস, প্রপাত, উপত্যকা গল্পগাথা...।

চারিদিকে সবুজ, সারি সারি
ইউক্যালিপটাস, পাইন, ফার, ম্যাগনোলিয়া গাছে ঘেরা পথটা। শহরের একেবারে মাঝখানে আমাদের হোটেলটি ছিলো ভারি সুন্দর। আমাদের রুমের সাথে এক চিলতে বারান্দা। পাহাড়টিলাকে পেঁচিয়ে হোটেল আর বারান্দা থেকে চোখ মেললে কোদাই লেক।

একঘেয়েমি ছেড়ে নতুন আবহে প্রবল শীত অথচ ঢাকায় তখন প্রচন্ড গরম। আমার বন্ধু বলেছিল, আবার চলে এসো ফ্রেশ অক্সিজেন নিতে।

দক্ষিণ ভারতে তামিলনাড়ু রাজ্যের ডিন্ডিগল জেলার, কোদাইকানাল শহর। কোদাইকানাল শব্দটির তামিল তর্জমা করলে ‘THE GIFT OF FOREST’।

কোদাইকানালের প্রাকৃতিক সুন্দরতার সংযোজন হল নানা ধরনের বুনোফুল’। রাস্তার দুধারে কোদাইকানালের রূপমাধুরী দ্বিগুণ বেড়ে যায় ফুলের মাদকতা ও বৈভবে।

ঢাকা থেকে বিকেলের ফ্লাইটে কলকাতা। রাতে এয়ারপোর্টের ধারে হোটেলে থেকে ভোরবেলায় চেন্নাইয়ের ফ্লাইট।

সকালের নাস্তা একেবারে কলকাতার বাড়িতে তৈরী লুচি, ভাজি... খেলাম বিমানের সিটে বসে। বৌদিদের ধন্যবাদ। যারা ফেবুতে আছেন। চেন্নাই থেকে আবার বিমান বদলে তিরুচিরাপল্লী। আদর করে বলে ত্রিচি। শহরটি রাজ্যের রাজধানী চেন্নাই থেকে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও কন্যাকুমারী থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। হোটেল থেকে বের হয়ে সারারাদিন গাড়িতে টইটই ঘুরে দুপুরে তামিলনাড়ুর থালি খেয়ে রওনা হই কোদাইকানালের উদ্দেশ্যে। আনন্দটা বেশি ছিলো কারণ মোট পাঁচটি গাড়িতে আমরা দশজন। ত্রিচি থেকে কোদাইকানাল দূরত্ব মাত্র ২০০ কিলোমিটার । কিন্তু পাহাড়ী পথ সমতল থেকে প্রায় ৭০০০ ফুট উঁচু ।আঁকাবাঁকা পথে রাস্তার দুধারে নেই কোনো ল্যাম্পপোস্ট । ঘুটঘুটে অন্ধকার। নেই মোবাইল নেটওয়ার্ক। আমাদের আসলে সকালেই রওনা হলে ভালো হতো। পথ আর শেষ হয়না । একটু ভুল হলেই একেবারে গভীর অরণ্যে হারিয়ে যেতে হবে। আমি আর ডোনা এক গাড়িতে। আমাদের সামনে দুগাড়ি আর পিছনে দুগাড়ি। হঠাৎ সামনের গাডড়ি দুটো থেমে গেলো। পাহাড়ী ভয়ংকর রাস্তা। হঠাৎ করেই বিপরীত দিক থেকে চলে আসে বড় কোন গাড়ি। যদি ও রাস্তায় গাড়ি নেই আমাদের বহর ছাড়া। রাত সাড়ে নয়টায় হোটেলে। প্রায় পাঁচঘন্টার যাত্রা ত্রিচি থেকে।

হোটেলে আগেই বুকিং থাকায় চট করে কক্ষে ব্যাগ নিয়ে চলে আসি । রাতের খাওয়া দাওয়া শেষে ঘুম। ভোরবেলায় ব্যালকনিতে আসতেই চোখ পড়ে কোদাই হৃদে। শহরের প্রাণকেন্দ্রে এই কৃত্রিম ঝিলটি দেখতে তারা মাছের মতো।
সকালের নাস্তা সেরে লবিতে যাই দর্শনীয় স্থানগুলোর খবর নিতে । নানান স্পটের মাঝে হঠাৎ একটি নামে ভয় ধরে গেল। স্পটের নাম” সুইসাইড পয়েন্ট”।

ভাল লাগায় ভরিয়ে দিয়েছিল কোদাইকানালের ‘কর্কাস ওয়াক’। টানা ২ কিলোিমিটার রেলিং ঘেরা টালির টাইলস বসানো পথটির ওপর দিয়ে যেতে যেতে মনে হয় ‘আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ’।

সুইসাইড পয়েন্ট আসি পরদিন বিকেলে। চারদিক ঘন সবুজ। সবুজের গা বেয়ে নেমে আসা মেঘ। পাহাড়ের মাথা থেকে যে দিকে চোখ যায়, শুধুই অপরূপ। কোথাও আবার খাড়া পাহাড়। সবুজের লেশমাত্র নেই। রয়েছে রুক্ষতা। আর সেই রুক্ষতাতেই সৌন্দর্য হয়ে উঠেছে ভয়ংকর। যেখান থেকে চোখ ফেরানো অসম্ভব।
গল্পকথাও আছে, ভালোবাসা না পেয়ে পাহাড়ের ওপর থেকে ঝাঁপ দিয়েছিলেন অনেক প্রেমিক বা প্রেমিকা। আর তাই এমন অদ্ভুত নাম।কোদাই লেক থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে সুইসাইড পয়েন্টের নতুন নাম দিয়েছেন গ্রিন ভ্যালে ভিউ।

কোদাইকানালের দক্ষিণ-পশ্চিমে পাইন ফরেস্ট। সমস্ত অঞ্চলটাই মূলত দক্ষিণ ভারতীয় চলচিত্রের গুরুত্বপূর্ণ শুটিং স্থল। সবুজ ঘাসে ঢাকা একটা উপত্যকা ঘেরা সুন্দর এলাকা দেখিয়ে আমাদের ড্রাইভার জানাল যে এটি নাকি বিখ্যাত চলচ্চিত্র অভিনেতা কমল হাসানের ব্যক্তিগত মালিকানাধীন এলাকা। সত্য মিথ্যা জানি না।
আরো দারুণ কিছুর অভিজ্ঞতা বাকি রেখে দিলাম । আরেকদিন লিখবো।

কোদাইকানাল মায়াবী আলোয়ানের মতো এখনো জড়িয়ে আছে। পাহাড়ি সবুজে ঢাকা, সোঁদা গন্ধ মাখা পাইন বন, কবিতার মতো উপত্যকা আকৃষ্ট করে আমাকে। রাস্তার পাশে সদ্য তোলা পাতাসমেত পাহাড়ী গাজর এবং অন্যান্য সবজি ফল দেখে আনন্দে মন ভরে ওঠে। সুন্দরতার আবেশ, মেঘের জলছবি, সবুজে নীল পাহাড় আবিষ্ট করে এখনো। কোদাইকানাল থেকে মাদুরাই পথে ফিরতে ফিরতে স্মৃতিতে ধরে রাখি ওই ঝিল, অস্থায়ী আবাস, প্রপাত, উপত্যকা গল্পগাথা...।

কিভাবে যাবেন

কোদাইকানাল থেকে সবচেয়ে কাছের এয়ারপোর্ট হলো- মাদুরাই, দূরত্ব ১২০ কিলোমিটার। অপর এয়ারপোর্ট কোয়েম্বাতুরের দূরত্ব ১৮০ কিলোমিটার। আর ট্রেনে সবচেয়ে কাছের স্টেশন কোদাইরোডের দূরত্ব ৮০ কিলোমিটার।কলকাতা থেকে কন্যাকুমারী এক্স-১২৬৬৫ ট্রেনে করে কোদাইকানাল যাওয়া যায়।এছড়া বাসেও যাওয়া যায়।

থাকার ব্যবস্থা

থাকার জন্য কমবেশি সব দামে প্রচুর হোটেল ও লজ আছে। আগে থেকে অনলাইনে বুকিং দিয়ে যাওয়া যাবে। সেখানে গিয়ে বুক করতে পারবেন। তবে পিক সিজনে আগে থেকে বুকিং দিয়ে রাখলে সুবিধা। সেখানে ৫ তারকা মানের হোটেলগুলো হলো- কোদাই রিসোর্ট হোটেল, হোটেল জয়, দি কার্লটন, কোদাই সানশাইন হোটেল ইত্যাদি।

লেখক : অধ্যাপক ডা. এস এম মোস্তফা জামান, ইন্টারভেনশাল কার্ডিওলজিস্ট, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা

Green Tea
সর্বশেষ
জনপ্রিয়