Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১০ এপ্রিল ২০২৫,   চৈত্র ২৭ ১৪৩১

কয়ছর আহমদ, পর্যটক

প্রকাশিত: ১৫:৪৬, ২৪ ডিসেম্বর ২০২০

ঘুরে এলাম নীল সমুদ্রের দেশে

সৈকতে সাদা নরম বালু সামনে বিস্তৃত নীল সমুদ্র। তাতে রংবেরঙের ছোট ছোট নৌকা। পেছনে সবুজের চাদর বিছানো পাহাড়। বেড়ানোর জায়গা যদি এমন হয়, তাহলে মুগ্ধ না হয়ে উপায় কী।

এমন একটি জায়গা থাইল্যান্ড। যেকারণে পার্বত্য সৌন্দর্যে ঘেরা থাইল্যান্ডের প্রতি পর্যটকদের বিশেষ আকর্ষণ রয়েছে। ভ্রমণ প্রিয় বাংলাদেশীদের বিদেশ ভ্রমণের শীর্ষ তিন দেশের একটিও এই থাইল্যান্ড।

কারণ, ভারত-নেপাল ছাড়া কম খরচে, ঝামেলাবিহীন সহজে ভ্রমণ করা যায়। তাই বাংলাদেশি পর্যটকদের পছন্দ থাইল্যান্ড। তাছাড়া পার্বত্য প্রকৃতি, সাস্কৃতিক ঐতিহ্য, বর্ণময় আচার-অনুষ্ঠান আর অসাধারণ সব সমুদ্র সৈকত; এর সাথে পর্যটন বান্ধব সুযোগ সুবিধার জন্য থাইল্যান্ড পর্যটকদের সেরা আকর্ষণ।

ফুকেট, কো সুমাই, পাতায়া, কো তাও, পাতাং ইত্যাদি অঞ্চলের সাথে রয়েছে সমুদ্রের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক। এসব এলাকায় নাইট লাইফ ও পর্যটন আকর্ষনীয়। স্থানীয়রাও যথেষ্ট সহায়ক এবং বন্ধুভাবাপন্ন।

স্কুবা ডাইভিং, প্যারা গ্লাইডিং কিংবা হাঙরের সঙ্গে সাঁতার কাটার মতো রোমাঞ্চকর কোনো অভিজ্ঞতা পেতে আপনাকে যেতে হবে থাইল্যান্ডে।

বাংলাদেশ থেকে ভ্রমণ ছাড়াও কম খরচে মেডিকেল ট্যুরিজমের জন্যও অনেকে থাইল্যান্ড যান। সেখানকার বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে বাংলাদেশী রোগীদের ব্যস্ততা থাকে সবসময়।

থাইল্যান্ড যেতে ভিসা লাগবে। তবে ভিসা প্রসেসিং এখন অনেকটা সহজ। পাসপোর্টে ভারতের ভিসা থাকলে এবং ব্যাংক স্টেটমেন্টে বর্তমান ব্যালেন্স এক লক্ষ টাকা দেখাতে পারলে ভিসা পাওয়া সমস্যা হওয়ার কথা না। আর ভিসা পেলেই থাইল্যান্ড যেতে দেরি করাটা ঠিক হবেনা।

ভ্রমণে দুই জন বা চার জন হলে খুব ভালো। ঢাকা থেকে কমবেশী ১৮-২০ হাজার টাকায় পাওয়া যায় থ্যাইলেন্ডের ইকোনমি বিমান টিকেট। সেখান থেকে ব্যাংকক এয়ারপোর্ট।

ব্যাংকক

থাইল্যান্ডের রাজধানী। ব্যাংকককে রঙিন শহর বললে ভুল বলা হবে না বোধ করি। বাড়িঘর-অফিস-কাছারি থেকে গাড়ি-ঘোড়া সবই নানা রঙে রঙিন। সারা দিন ব্যাংকক শহর ঘুরে দেখুন। সন্ধ্যায় নদীতে বোট ভ্রমণ করুন।

সুকুমভিত এলাকায় হোটেল নিতে পারেন। ঘুরে দেখতে পারেন গ্রান্ড প্যালেস, ন্যাশনাল মিউজিয়াম, স্বর্ন মন্দিরসহ বিভিন্ন মন্দির, চায়না টাউন, সিয়াম ডিসকভারি শপিং মল, ১৫০ বছরের পুরনো রামা ৫-এর বাসস্থান ভিমানমেক ম্যানশন, চাতুচাক (চাতুচাক পার্ক), সাবওয়ে রেলস্টেশন (পাতাল ট্রেন), ফ্লুটিং মার্কেট, লুমপিনি পার্ক ও থাইল্যান্ডের সবচেয়ে উঁচু বিল্ডিং বাইওকি স্কাই হোটেল।

পাতায়া

এশিয়ার অন্যতম ট্যুরিস্ট ডেস্টিনেশনের নাম পাতায়া। থাইল্যান্ডের সমুদ্রশহর পাতায়ার প্রবাল দ্বীপের পরতে পরতে এমনই সৌন্দর্য যে সারাবছরই এখানে পর্যটকদের আনাগোনা দেখা যাবে।

পাতায়া শহরটা যেন ছবির মত। নানান রকম বর্ণিল বাতির কল্যাণে সারা রাত জেগে থাকে এই শহর। অন্ধকার নামতেই প্রাণ ফিরে পায় শহরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অজস্র ক্লাব, বার, রেস্তোরা প্রভৃতি।

স্পিডবোটে সমুদ্রের মাঝখানে ঘুরে বেড়াতে পারবেন ঝামেলা ছাড়াই। ডুবুরীর পোশাক পরে নেমে যেতে চাইলে নামতে পারবেন জলে। আর জলের তলে আপনার আবিস্কারের অপেক্ষায় রয়েছে অবারিত সৌন্দর্য।

পাতায়া শহরের রয়্যাল গার্ডেন প্লাজার দোতলায় আছে চমৎকার এক জাদুঘর। এখানে পৃথিবীর একমাত্র তিন পাওয়ালা ঘোড়াসহ হাজার হাজার আশ্চর্য জিনিস আছে।

এছাড়া ঘুরে দেখুন পাতায়া বিচ, জমটিয়েন বিচ। পরেরদিন এই কোরাল আইল্যান্ড ভ্রমণ করুন। একটি অসাধারন দিন কাটবে আপনার। স্কুবা ড্রাইভিং, প্যারাগ্লাইডিং করুন সমুদ্রকে সাথী করে।

ফুকেট

সুনীল আন্দামান সাগরের তীরে থাইল্যান্ডের পশ্চিম সীমান্ত ঘেঁষে বিশ্বের অন্যতম পর্যটন নগরী ফুকেট। যা কিনা দিবা রাত্রি হাজারো পর্যটকের পদচারণায় মুখর থাকে। থাইল্যান্ডের সবচেয়ে বড় এই দ্বীপটি আনুমানিক ৫৭০ কিমি বিস্তৃত সাগর বেষ্টিত। যেখানে রয়েছে অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।

ফুকেটের চারিদিকে ছড়ানো ছিটানো অনেক ছোটো ছোটো দ্বীপমালা আর পাহাড়। তবে এগুলোর বেশিরভাগই জনবসতিহীন। বৌদ্ধ অধ্যুষিত ফুকেটের ৩০ শতাংশ জনগন মুসলিম। জাতিতে তারা বেশীরভাগই সীমান্তের অপর পারের দেশ মালয়েশিয়ার মালয়ান জাতিভুক্ত।

সবুজ পাহাড়ে আবৃত ফুকেটে রয়েছে নাম না জানা গাছ আর ফুলের সমারোহ। কত রকম বাহারী অর্কিড, প্রিয়ফুল। সুনীল আন্দামান সাগর থেকে ধেয়ে আসা ঢেউ আছড়ে পড়ছে বেলাভুমিতে!

একদিনে ঘুরতে পারেন মায়া বে, মাংকি বিচ, ফি ফি আইল্যান্ড, খাই নক আইল্যান্ড, পিলেহ লেগুন ইত্যাদি। চোখে গগলস পরে, মুখে একটা পাইপ লাগিয়ে, পানির উপর দিয়ে ভেসে পানির নিচে দেখার ব্যবস্থা আছে।

পানির নিচের জগৎকে এক অন্য জগৎ মনে হয়। রঙ বেরঙ  এর প্রবাল আর মাছ সব আপনার গা ঘেঁষে চলে যাচ্ছে! ভেবে দেখুনতো একবার! আপনার জীবনের শ্রেষ্ঠ অভিজ্ঞতা হবে। কেননা পানি, সমুদ্র, সৈকত, আকাশ সবই অদ্ভুত সুন্দর।

সময় আর টাকা সমস্যা না থাকলে থাইল্যান্ড ভ্রমণে ফুকেটে অবশ্যই যাওয়া উচিত। ব্যাংকক থেকে প্রতিদিন ফুকেট যাওয়ার ফ্লাইট আছে। ফুকেট ফ্যান্টাসি থিম পার্ক দেখুন। থাইল্যান্ডের সবচেয়ে বড় থিম পার্ক। আইয়ারা প্যালেসে এলিফ্যান্ট শো দেখুন।

এছাড়াও চিয়াংমাই যেতে পারেন। ইতিহাসের অনেক বৈচিত্রের সমারোহ আছে সেখানে।

৩-৪ দিনের থাইল্যান্ড ট্যুর করতে চাইলে ব্যাংকক, পাতায়া যেতে পারেন। সর্বমোট খরচ ধরে রাখুন ৩৫ হাজার। অর্থাৎ বিমান ভাড়া ছাড়া বেশী হলে ১৫ হাজার টাকায় হবে।

এছাড়া ফুকেট গেলে বাড়তি ৩ দিন লাগবে আর টাকা যোগ হবে ১০-১২ হাজারের মতো।

মনে রাখবেন-

  • ১. যারা প্রথমবার যাবেন তারা অবশ্যই দেশ থেকে হোটেল বুকিং দিয়ে যাবেন,
  • অতিরিক্ত টাকা নিবেন না, কারণ কম টাকায় মার্কেটিং সহ খরচের অনেক মাধ্যমের আবাস্থল হলো থাইল্যান্ড।
Green Tea
সর্বশেষ
জনপ্রিয়