Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১০ এপ্রিল ২০২৫,   চৈত্র ২৭ ১৪৩১

শ্যামলাল গোঁসাই

প্রকাশিত: ১৭:৩৮, ১৯ জানুয়ারি ২০২১
আপডেট: ১৮:০৬, ১৯ জানুয়ারি ২০২১

মাল্টা: বহু শাসকের শাসনে শাসিত বিশ্বের ক্ষুদ্রতম দেশ

মাল্টা, নামের মতোই ছোট্ট একটা দেশ। এই দেশটি ইউরোপের সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম দেশের খেতাব জিতেছে। তবে নামে কিংবা আয়তনে ছোট হলেও মাল্টার রয়েছে দীর্ঘ সময়ের রাজনৈতিক ইতিহাস, শাসনের গল্প। রয়েছে বিশ্বের সুন্দর সুন্দর জায়গাগুলোর কিছুও।

মাল্টার আয়তন ৩১৬ বর্গ কিলোমিটার। ইতালির সিসিলি দ্বীপ থেকে আনুমানিক ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং জিব্রাল্টার প্রণালী থেকে ১,৮২৬ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত রিপাবলিক অব মাল্টা। দেশটির জনসংখ্যাও মাত্র চার লক্ষ।  তিনটি বড় দ্বীপ- মাল্টা, গোজো ও কোমিনো নিয়ে গড়ে ওঠা এক দেশ মাল্টা।  

ভূমধ্যসাগরীয় রাষ্ট্র মাল্টা ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছে এর ভৌগলিক অবস্থানের কারণে। ফিওনিশিয়ানস, রোমান, বাইজেন্টাইন, এমনকি আরবরা সৈন্যদেরও স্মৃতি রয়েছে এই মাল্টার বুকে।

রোমান সাম্রাজ্য মাল্টাকে পূর্ব ও পশ্চিমে দুই অংশে বিভক্ত করে

খ্রিস্টের জন্মের ৮০০ বছর পূর্বে মাল্টায় আগমন ঘটে ফিওনিশিয়ানসদের। আর চারশো বছর পূর্বে দেশটি দখলে নেয় কার্থেজেনীয়রা। চতুর্থ শতকে রোমান সাম্রাজ্য মাল্টাকে পূর্ব ও পশ্চিমে দুই অংশে বিভক্ত করে।

ঐতিহাসিক বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের সূচনাও এখান থেকেই। মাল্টার পূর্ব অংশ রোমান সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল, তাই পরবর্তীকালে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য হিসেবে পরিচিতি পায়। এরপরে আসে আরবরা। তারা এসেও মাল্টায় শাসন করে প্রায় দুইশ বছর।  

আসে ইংরেজরা। ইংরেজদের আগমনের পরপরই ব্রিটিশ কলোনি হিশেবে যাত্রা শুরু করে মাল্টা। এখানেও রচিত হয় মাল্টা অধিবাসীদের শোষণের ইতিহাস। যারা এর আগেও আরও অনেক বহিরাগত ধারা শোষিত। এসব কারণে মাল্টা দেশটি ক্ষুদ্র হলেও, এর রাজনৈতিক গুরুত্ব ইতিহাসে অপরিসীম।

মাল্টার রাজধানী ভাল্লেট্টার নয়নাভিরাম সৌন্দর্যে ঘেরা বাড়িগুলো যেকারো নজর কাড়বে।

বর্তমান মাল্টার সরকারি ভাষা ইংরেজি। তবে এদেশের প্রায় সকলেই মাল্টীয় ভাষাতে কথা বলতে পারেন এবং বলেনও। এছাড়াও প্রায় ৮০ শতাংশ লোক  ইংরেজিতে, ৬৬ শতাংশ  লোক  ইতালি ভাষাতে এবং ১৭ শতাংশ লোক ফরাসি ভাষায় কথা বলতে জানেন।

তবে এসব ছাড়াও মাল্টার স্কুল, কলেজে এখন জার্মান, রুশ এবং স্প্যানিশ ভাষাও শিক্ষা দেওয়া হয় বলে জানা যায়।

মাল্টার অর্থনীতির মূলে তাকালে এর অতীতের ইতিহাস অনেকটা আঁচ করা যায়। অতীতকালে ভৌগলিক অবস্থানের কারণে বহির্বিশ্বে যেমন গুরুত্বপূর্ণ ছিলো মাল্টা এখনও তেমনি আছে। মাল্টার অর্থনীতির মূলে রয়েছে বৈদেশিক বাণিজ্য।

মাল্টা পৃথিবীর অন্যান্য দেশের নৌবাণিজ্যের শিপমেন্ট পয়েন্ট হিসেবে কাজ করে

দেশটি পৃথিবীর অন্যান্য দেশের নৌবাণিজ্যের শিপমেন্ট পয়েন্ট হিসেবে কাজ করে। এছাড়া বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ও টেক্সটাইল শিল্প এবং পর্যটন শিল্প এর অর্থিনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পর্যটন শিল্পের জন্য মাল্টায় রয়েছে ঐতিহাসিক অনেক স্থাপত্য।

ঐতিহাসিক নানা স্থাপনা, নান্দনিক স্থাপত্যশিল্প, বিনোদনের নানা সুযোগ-সুবিধা থাকায় দেশটি পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয়।

মাল্টার রাজধানী ভাল্লেট্টা, এই শহরেরই রয়েছে এক অভূতপূর্ব ইতিহাস। ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায় প্রায় এই নগরীর গোড়াপত্তন ঘটে আজ থেকে প্রায় সাড়ে চারশো বছর আগে। এই শহরের নামের পেছনে লুকিয়ে আছেন গ্র্যান্ডমাস্টার জ্যঁ প্যারিজো দে লা ভালেট্টা। মূলত তাঁর নামানুসারেই এই শহরের নাম রাখা হয় ভাল্লেট্টা।

মাল্টার রাজধানী ভাল্লেট্টায় পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ দ্য গ্রান্ড মাস্টার্স প্যালেস

ভাল্লেট্টার প্রধান আকর্ষণ দ্য গ্রান্ড মাস্টার্স প্যালেস। নগরীর সবচেয়ে পুরনো ও সুন্দর প্রাসাদগুলোর একটি এটি। তবে এখন প্রাসাদটির একটি অংশ রাষ্ট্রপতির কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আর প্রাসাদের বাকি অংশ পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে।

দ্য গ্রান্ড মাস্টার্স প্যালেসের নিকটেই রয়েছে রিপাবলিক স্কয়ার। কিছু সময়ের জন্য ঘুরে বেড়াতে, ক্যাফে আর রেস্তোরাঁয় সুস্বাদ্য খাবারের স্বাদ নিতে পর্যটকরা এখানে ভিড় করেন।

ভাল্লেট্টায় রয়েছে প্রায় তিনশোর বেশি নানা ঐতিহাসিক স্থাপনা, যেমন- দুর্গ, গির্জা, প্রাসাদ। যে কারণে এই শহরকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো। ভাল্লেট্টায় তৈরি বাড়িগুলো চুনাপাথরের। তাই এর সৌন্দর্য পর্যটকদের চোখে ধরা দেয় একটু অন্যভাবে।

মাল্টার আরেকটি দৃষ্টিনন্দন আকর্ষণের নাম চার্চ অব সেন্ট মেরী। বিশ্বের বৃহত্তম গম্বুজওয়ালা স্থাপত্যগুলোর একটি এটি। ১৮৬০ সালে নির্মিত এই চার্চ নিয়ে রয়েছে রূপকথাও।

মাল্টার আরেকটি দৃষ্টিনন্দন আকর্ষণের নাম চার্চ অব সেন্ট মেরী

রূপকথাটি সংক্ষেপে এরকম- শোনা যায়, ১৯৪২ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই গির্জার ওপর তিনবার বোমা বর্ষণ হয়েছিল। তার মধ্যে দুটো গম্বুজের ওপর পড়ে অন্যদিকে ছিটকে যায়। আর তৃতীয় বোমাটি যখন পড়ে তখন গির্জার মধ্যে ৩০০ যাজক উপস্থিত ছিলেন। আশ্চর্যের বিষয় হলো, বোমাটি যখন গম্বুজের ওপর পড়ে তা থেকে কোনো বিস্ফোরণ ঘটলো না। গির্জার বাইরের একটি ঘরে বোমাটির একটি প্রতিকৃতি তৈরি করে রাখা আছে।

তাছাড়া এ চার্চের খিলানের স্তম্ভগুলো এবং ত্রিকোণাকৃতির কার্নিশগুলো রোমের প্যানথিয়ানের নকশায় তৈরি। গির্জাটিকে বহু মূল্যবান জিনিসপত্র দিয়ে সাজানো হয়েছে। দেওয়ালের নকশাগুলো সব সোনা দিয়ে মোড়া। মেঝের পাথরগুলো জটিল জ্যামিতিক নকশা দিয়ে তৈরি।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহাসিক স্থাপত্য, রাজনৈতিক ইতিহাস নিয়ে আজ মাল্টা বিশ্বের পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় এক দেশ। তাই প্রতিবছর দেশটিতে লাখ লাখ মানুষ ঘুরতে আসেন। যারা ঘুরে বেড়ান এই দেশের আনাচে-কানাচে মাল্টার নীল জলের বুক ছুয়ে ধেয়ে আসা বাতাস তাদেরকে হয়তো মাল্টার অতীতের ইতিহাস গুনগুণ করে।

Green Tea
সর্বশেষ
জনপ্রিয়