শ্যামলাল গোঁসাই, আইনিউজ
আপডেট: ২২:২১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২১
দুবাই ভ্রমণ
বাঙাল আদমির জাদুর শহর ভ্রমণ
![বার দুবাই থেকে দেরা দুবাই যেতে চড়তে হবে এসব ওয়াটার টেক্সি। ছবি- শ্যামলাল গোঁসাই বার দুবাই থেকে দেরা দুবাই যেতে চড়তে হবে এসব ওয়াটার টেক্সি। ছবি- শ্যামলাল গোঁসাই](https://www.eyenews.news/media/imgAll/2021April/shyamlal-gosai-dubai-tour-1-2112242119.jpg)
বার দুবাই থেকে দেরা দুবাই যেতে চড়তে হবে এসব ওয়াটার টেক্সি। ছবি- শ্যামলাল গোঁসাই
`বার' দুবাই সংযুক্ত আরব আমিরাতের একটি ঐতিহ্যবাহী শহর। আসলে আদি দুবাইকে জানতে হলে আপনাকে `বার' দুবাই ভ্রমণ করতে হবে, ঘুরতে হবে। আঠারো শতাব্দীর শুরুর দিক থেকে মৎস্য ব্যবসাকে কেন্দ্র করে দুবাইর যাত্রা শুরু হয় এই বার দুবাই থেকেই। যেকারণে দুবাইর এই অংশটিকে `মেইনল্যান্ড` হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
এই বার দুবাই-এ ঘুরতে ঘুরতে আপনি পেয়ে যাবেন দুবাই জাদুঘর, গ্র্যান্ড মসজিদ, নান্দনিক পার্ক এবং সেই আঠারো শতাব্দীর পুরোনো দুবাইর প্রাচীন স্মৃতি। যা গুরুত্বের সাথে সংরক্ষণ করে রেখেছে স্থানীয় প্রশাসন। দুবাইয়ের প্রাচীন সব ইমারতগুলো দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিলো সেই আঠারো শতাব্দীতেই ফিরে গেছি। যখন শহর হিশেবে এই মরু অঞ্চলটি মাত্রা যাত্রা শুরু করেছিলো। দুবাই ভ্রমণ পৃথিবীকে জানার অন্য মাত্রা যোগ করেছে।
এখানে ঘুরতে আসলে অবশ্যই দুবাই খালের পাড়ে থাকা এসব রেস্তোরায় বসে খেতে খেতে পারস্য সাগরের এই অংশটুকু দেখতে ভুল করবেন না। ছবি- শ্যামলাল গোঁসাই
মাত্র সাতশো-আটশো মানুষের মাধ্যমে গড়ে ওঠা দুবাই আজ বিশ্বের অন্যতম আকর্ষণ এবং জনবহুল শহর। বর্তমানে জাঁকজমকভাবে বিভিন্ন খেলাধুলার আয়োজন করেও নজর কেড়েছে দেশটি৷ কে বলবে এই দুবাই তার যাত্রা শুরু করেছিলো মৎস ব্যবসাকে পুঁজি করে?
আসুন, বসুন আর উপভোগ করুন দুবাই খালের সৌন্দর্য। সাথে পারস্য সাগর থেকে বয়ে আসা দখিনা হাওয়াও পাওয়া যাবে সবসময় বিনামূল্যে। ছবি- শ্যামলাল গোঁসাই
তবে হ্যাঁ যাদের ইতিহাসে ঝোঁক নেই, অর্থাৎ যারা আড়ম্বরে পূর্ণ আধুনিক দুবাই দেখতে চান তারা এই বার দুবাই থেকেই এক দিরহাম খরচ করে নান্দনিক ওয়াটার টেক্সি চড়ে চলে যেতে পারবেন দেরা দুবাইয়ে। এই দেরা দুবাই-ই আধুনিক দুবাই। যা বিশ্বকে একের পর এক চমক দেখিয়ে যাচ্ছে।
দুবাই ফেরি। আলিসান এই বোট দেখতে যতোটা আকর্ষণীয় চড়তে ততোটাই রোমাঞ্চকর।
বার দুবাই এবং দেরা দুবাইকে কিংবা আরও সহজ করে বললে পুরোনো দুবাই এবং নতুন দুবাইকে ভাগ করে দিয়েছে বিখ্যাত দুবাই খাল। খালের একপাশে শত বছরের স্মৃতি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বার দুবাই। আর অন্যপাশে সময়ের আধুনিকতম শহর হিশেবে শোভা বিলিয়ে যাচ্ছে দেরা দুবাই।
দুবাই খালের ওপারেই আছে জাদুর সেই শহরটি। এই পাড়ে আছে গ্রান্ড মসজিদ, দুবাই জাদুঘর,ওই পাড়ে রয়েছে বুর্জ খলিফা।
অবশ্য অনেকেই এই দুটি শহরকে বলে থাকেন বেহুদ্দা পয়সা উড়ানোর শহর। বাস্তবতাও তাই। এই দুই শহরে সকল ধরনের আমোদ-প্রমোদ, ফূর্তি, রংবাজির সবকিছুই রয়েছে। পয়সা খরচ করলেই যা আপনি ভোগ করার স্বপ্নও কোনোদিন দেখেননি তাও ভোগ করতে পারবেন। এর জন্য প্রয়োজন শুধু টাকা আর একটু শখ।
দুবাইর পুরোনো স্মৃতি নিয়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছে বার দুবাইয়ের এসব প্রাচীন স্থাপনা।
অবশ্য এখানকার কম বাঙালিই এই আমোদ-প্রমোদে গা ভাসান। এর কারণ, আমাদের দেশীদের অর্থনৈতিক অবস্থা। আগেই বলেছি দুবাইয়ে বাঙালি ছাড়াও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে আছে ভারতীয় এবং পাকিস্তানি নাগরিকরাও। আর এখানে তুলনামূলক বেশি বেতনের কাজ ভারতীয় আর পাকিস্তানিরাই করছে। বাঙালিদের অনেকেও বেশি বেতনের কাজ করলেও এই সংখ্যাটা কম। যেকারণে পয়সা উড়িয়ে আমোদ-প্রমোদেও আমাদের দেশীয়দের তেমন একটা আগ্রহ নেই বা তাদের পাওয়া যায়না।
দুবাই জাদুঘরের একাংশ। বিস্তৃত পরিসরের এই জায়গাটিতে আসলেই আপনি প্রাচীন দুবাইয়ের গন্ধ শুঁকতে পারবেন। ছবি- শ্যামলাল গোঁসাই
যাদের পাওয়া যায় তাদের অনেকেই হয় উত্তরাধিকারসূত্রে পয়সাওয়ালা নাহয় এখানে ভালো বেতনের কাজ করছেন। কিন্তু সস্তায় যেসব আমোদ-প্রমোদ করা যায় তা ঠিকই করছেন কম বেতন পাওয়া বাঙালি শ্রমিকরাও।
নান্দনিক স্থাপনা। যা তোলে ধরে প্রাচীন দুবাইকে। অনেক বাঙালি এসব জায়গায় পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ করেন। ঘুরতে ঘুরতে পেয়েছিলাম তেমনি অনেককে।
দুবাই ভ্রমণ এর শুরুর সপ্তাহেই বার দুবাই ঘুরে যখন দেরা দুবাইয়ে ঢুকি, আলিসান সব বিল্ডিং, চমকে দেয়া সব কাজ কারবার দেখে নিজের দেশ নিয়ে কিঞ্চিৎ আফসোসও হয়েছে। আফসোসটা আমাদের জাতীয় অগ্রগতির। যার সাথে অবশ্যই জড়িত অর্থনৈতিক খাত।
দেখলেই বুঝা যায় মরুর দেশের স্থাপনা। যা এখন অনেক পর্যটকের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। ছবি- শ্যামলাল গোঁসাই
অনেকেই জানেন বা ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় দুবাই আজকের অবস্থানে আসতে খুবই অল্প সময় নিয়েছে। এখানকার পেট্রোলিয়াম ব্যবসা এর একটা প্রধান কারণ অবশ্যই। কিন্তু দুবাই যে শুধু পেট্রোলিয়াম খাত নির্ভর তা ভাবলে ভুল হবে।
আজকের দিনের একমাত্র বন্ধু। পশুপাখির সাথে ভাব জমাইতে পাসপোর্ট, ভিসা, ইমিগ্রেশন এগুলো কিছুই লাগেনা। প্রাণ বুঝে অপর প্রাণের মায়া, মমতা আর ভালোবাসা। ও হ্যাঁ, বার দুবাই এ এমন অনেক বিড়াল পাবেন। এগুলোর কোন মালিক নেই। আসলে অবশ্যই ৫ দিরহাম বা ২-৩ দিরহাম দিয়ে এদের জন্য একধরনের খাবার পাওয়া যায়, কিনে খাওয়াবেন।
পর্যটন খাত, এয়ারলাইন্স, রিয়েল এস্টেটও দুবাইর উল্লেখযোগ্য আর্থিক উৎস৷ আমাদের দেশেও পর্যটনের অপার সম্ভাবনা আছে, রিয়েল এস্টেট, এয়ারলাইন্স এসব ব্যবসা আছে। কিন্তু তদুপরি আমাদের জাতীয় অগ্রগতি তরান্বিত হচ্ছেনা কেন এই প্রশ্ন রাখা যায়। এই প্রশ্নের একটা উত্তরও মোটামুটি দেয়া যায়। আর সেটা হচ্ছে আমাদের জাতীয় দুর্নীতিগ্রস্থ পরিস্থিতি এবং স্বচ্ছতার অভাব।
ছবি তোলার সময় শিখ দাদাদের `পাজি ইধার দেখ্যো` বলেই ক্লিক করে নিলাম আরকি।
স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পর বাংলাদেশের ঠিক দুবাইর মতোই ঝলমলে অবস্থা আশার কথা আমি বলছিনা। কিন্তু জাতীয়ভাবে আমাদের যেটুকু স্বচ্ছল হবার কথা আমরা সেটুকুও পারিনি।
নির্মিতব্য এই ব্রীজটি আধুনিক দুবাই ও পুরোনো দুবাইয়ের মাঝে মিলন ঘটিয়েছে। তবে এই দুই শহর ছাড়া এটি আরও বেশ কিছু অঞ্চলের সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখবে বলে জানালেন এখানকার স্থানীয় প্রশাসনের একজন। ছবি- শ্যামলাল গোঁসাই
এক পদ্মা সেতু, ফ্লাইওভার, মেট্রোরেলকে উন্নয়নের মাপকাঠিতে রেখে বিচার করলে সুবিচার হবে বলে আমার মনে হয়না। কেননা এর কোনোটাতেই আমার দেশের বিশ কোটি মানুষ, যারা এখনো খেতে পারছে না তাদের কোন পরিবর্তন হবেনা বা হয়নি। আর আপনি যখন জাতীয় উন্নয়ন, অগ্রগতির কথা বলবেন তখন কোনোভাবেই ওই বিশ কোটি ভুকা ফাকা মানুষকে হিশেবের বাইরে রাখতে পারবেন না।
- আরও পড়ুন- শ্যামলাল গোঁসাইর কবিতা
এই ছবিটি দুবাইয়ের ঐতিহ্য আর মৎস ব্যবসার প্রাচীন জৌলুশকেই উপস্থাপন করে যাচ্ছেম দর্শকরা এখানে এসে একবার হলেও মুগ্ধ নয়নে চেয়ে থাকেন।
যাইহোক, এগুলো লিখতে থাকলে আমাদিগের পাঠকমাত্রই বিরক্ত বোধ করেন। তাই বিরক্তি কাটাতে আজকে ঘুরতে ঘুরতে বেশকিছু ছবি তোলে এনেছি। ঘুরতে ফিরতে আমার ভালো লাগে৷ আর যেহেতু আগামী বেশ কয়েকটি দিন ঘুরাঘুরি ছাড়া আমার কোন কাজ নেই, তাই ভেবেছি দুবাইর ঐতিহাসিক, আধুনিক সবকিছুকে একনজর করে দেখে নেবো। এতে পয়সার ব্যাপ্তি বাড়ুক না বাড়ুক জ্ঞান আর অভিজ্ঞতার ব্যাপ্তি বাড়বে বলেই আমার বিশ্বাস।
বলেছিলাম না মৎস ব্যবসা দিয়ে দুবাইর যাত্রা শুরুর কথা? প্রশাসনও তাদের ইতিহাসকে তোলে ধরতে এরকম জিনিস এখানে বানিয়ে রেখেছেন। যাতে সহজেই আপনি দুবাইকে জানতে পারেন। ছবি- শ্যামলাল গোঁসাই
আদি দুবাইর স্মৃতি সংরক্ষণে আমিরাত সরকার যতোটা উদ্যোগী তা প্রশংসনীয়। অন্যদিকে আমদের দেশে সংরক্ষিত বন কেটে ফাইভ স্টার হোটেল বানানো হচ্ছে, বনের গাছ চুরি করে বন কর্মকর্তারাই বিক্রি করে ফেলছে (এমন খবরও পড়েছি, দেখেছি)। তো বুঝতেই পারছেন আমাদের জাতীয় অগ্রগতি না হবার পেছনের কারণ কী?
দুবাই ভ্রমণ ও দুবাই নিয়ে আই নিউজে নিয়মিত লেখা পাবেন আশা করছি।
শ্যামলাল গোঁসাই, ফিচার প্রতিবেদক, আইনিউজ
আই নিউজ ভিডিও
ঘুরে আসুন মৌলভীবাজারের পাথারিয়া পাহাড়
হাইল হাওরের বাইক্কাবিলে পর্যটক আর পদ্মটুনার ভিডিও ভাইরাল
জলময়ূরের সাথে একদিন | বাইক্কা বিল | ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফি
বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক উৎসবে মুগ্ধ বিদেশিনী
- সিলেট ট্রেনের সময়সূচি ২০২৩ দেখুন
- ঢাকা টু সিরাজগঞ্জ ট্রেনের সময়সূচী এবং ভাড়ার তালিকা
- ঢাকা টু পাবনা ট্রেনের তালিকা এবং সময়সূচী
- চট্টগ্রাম টু ঢাকা ট্রেনের সময়সূচী এবং ভাড়ার তালিকা
- শীতকালে সিলেটের দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ
- এবার মাল্টার ভিসা পাওয়া যাবে ঢাকা থেকেই!
- ‘লাসুবন’- শ্রীমঙ্গলে প্রাচীন গিরিখাতের সন্ধান!
- টাঙ্গাইল টু ঢাকা ট্রেনের সময়সূচী এবং ভাড়া তালিকা
- ঢাকা টু দিনাজপুর ট্রেনের সময়সূচী এবং ভাড়ার তালিকা ২০২৩
- যশোর টু ঢাকা ট্রেনের সময়সূচী এবং ভাড়ার তালিকা