সাইফুর রহমান তুহিন
আপডেট: ১৩:৫৬, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
অপরূপ টাঙ্গুয়ার হাওরে মায়াবী সৌন্দর্যের হাতছানি
টাঙ্গুয়ার হাওরের সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য। ছবি- হেলাল আহমেদ
যে টাঙ্গুয়ার হাওরে পানির দীর্ঘ প্রবাহ মিশে যায় মেঘালয়ের উঁচু পাহাড়ের সাথে সেই চোখজুড়ানো জায়গাটি প্রতি বছর পরিভ্রমণ করে প্রায় ৩০ প্রজাতির পরিযায়ী বন্য হাঁস। আপনি সহজেই স্থানীয় গ্রাম থেকে একটি ছোট্ট ডিঙি নৌকা ভাড়া করে উপভোগ করতে পারেন এখানকার নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে।
টাঙ্গুয়া এমন একটি ভূমি যার আকৃতি একেক মৌসুমে একেক রকম হয় এবং এটি হয় পানির উচ্চতার ওপর নির্ভর করে। মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে এই সুবিশাল জলাভূমি সবসময়ই দেশ-বিদেশের পর্যটকদেরকে হাতছানি দিয়ে ডাকে। বার্ডওয়াচার বা পাখি পর্যবেক্ষকদের জন্যও এটি দারুণ জায়গা। দেশ-বিদেশের পর্যটকরা একথাও নির্দ্বিধায় স্বীকার করে থাকেন যে, সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পরিপূর্ণ দৃশ্য উপভোগ করার জন্যও টাঙ্গুয়ার হাওর দক্ষিণ এশিয়ার সেরা জায়গাগুলোর একটি।
টাঙ্গুয়ার বিদেশী পরিযায়ী পাখিরা
টাঙ্গুয়ার হাওর সম্পর্কে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো জীববৈচিত্র্যের কারণে এটি একটি রামসার সাইট, একটি সংরক্ষিত জলাভূমি। এখানে অনেকেই যান পাখি গুণতে, পাখির কলকাকলি শুনতে এবং বিভিন্ন গবেষণার কাজে। তবে স্থানীয় লোকজনের জন্য এটি হলো একটি প্রাকৃতিক মাছের জলাধার। এই এলাকার জলজ উদ্ভিদও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী এবং দারুণ বিচিত্র প্রজাতির। এখানে শীতকালে যে কেউ উপভোগ করতে পারেন বিভিন্ন বিল, ছোট ছোট দ্বীপ এবং নলখাগড়ার স্তুপের সৌন্দর্য।
টাঙ্গুয়ায় যারা বার্ড ক্যাম্প করেন তারা সাধারণত তাঁবু সাজান হিজল ও করচ গাছের নিচে। কিন্তু বর্ষাকালে ভিন্ন রূপ ধারণ করে টাঙ্গুয়া, হয়ে যায় সীমাহীন সাগরের মতো এক বিশাল জলাভূমি। নৌকা ভেড়ানোর জায়গাও তখন মেলে না সহজে, গ্রামগুলো হয়ে যায় একেবারে নির্জন দ্বীপের মতো।
এ যেন জলের ওপর ভাসমান এক গ্রাম কিংবা জনজীবন। ছবি- হেলাল আহমেদ
আগেই বলা হয়েছে যে, শীতকালে আনুমানিক ৩০ প্রজাতির পরিযায়ী বন্য হাঁস টাঙ্গুয়ার হাওরে অবস্থান করে। আপনি সহজেই স্থানীয় গ্রাম থেকে একটি ডিঙি নৌকা ভাড়া করে হাসের পালের কাছে যেতে পারেন তাদেরকে কোনোরূপ বিরক্ত না করে। এরপর উপভোগ করতে পারেন চীন, মঙ্গোলিয়া এমনকি সাইবেরিয়া থেকে আসা হাঁসগুলোর অনুপম সৌন্দর্য। একটি পাল বা ঝাঁকের মধ্যে থাকা বন্য হাঁসের সংখ্যা হতে পারে এমনকি এক লক্ষ পর্যন্ত।
টাঙ্গুয়ার হাওরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শীতকালীন অধিবাসী হলো বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির পাল্লাস’স ফিস ঈগল। এসব পাখিকে এই জলাভূমির রাজা আখ্যায়িত করা হয়। এরা এখানে জন্মগ্রহণ করে, তারপর শেখে কীভাবে উড়তে এবং মাছ শিকার করতে হয়। আর বর্ষাকাল আসলে উড়ে চলে যায় মঙ্গোলিয়া কিংবা হিমালয়ের দিকে। শীতকালে আবার এখানে ফিরে আসে এবং আশ্রয় নেয় আগের তৈরি করা নীড়েই। আকাশে উড়ন্ত অবস্থায় এই ঈগল হলো বাংলাদেশের সবচেয়ে জাদুকরী প্রাকৃতিক দৃশ্যগুলোর একটি।
একসময় টাঙ্গুয়ার হাওরে যাওয়া ছিলো দীর্ঘ এক ভ্রমণ। ঢাকা থেকে গোলাবাড়ি গ্রামে পৌঁছতে প্রায় দুদিন লেগে যেতো। তবে সড়ক অবকাঠামোর উন্নতি এবং নতুন নতুন ব্রিজ তৈরির পর অবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে। এখন তো রাজধানী ঢাকা থেকে আধাদিনেই টাঙ্গুয়ায় যাওয়া যায়। শুধু তা-ই নয়, ভাড়া দিয়ে আপনি থাকতে পারেন ‘বজরা’ নামে সুপরিচিত স্থানীয় কিছু নৌকায়। এর পাশাপাশি শীতকালে থাকতে পারবেন পার্শবর্তী গ্রামের কোনো ঘরে পেইং গেস্ট হিসেবে।
টাঙ্গুয়ার স্বচ্ছ নীল জলে যাত্রীবাহী নৌকা। বর্ষায় নৌকাই এই এলাকায় প্রধান বাহন।
বর্ষাকালে দেখবেন যে, পর্যটকভর্তি বড় বড় নৌকাসমূহ হাওরের সর্বত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে। কখনো কখনো দেখা যায় যে, পর্যটকরা বিদায় নেওয়ার পর প্লাস্টিকের বোতল এবং বিভিন্ন ধরনের খাবারের অপচনশীল প্যাকেটসমূহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে যা খুব দু:খজনক।
সবারই মনে রাখা উচিত যে, টাঙ্গুয়ার হাওর একটি সংবেদনশীল ন্যাচারাল সাইট। তাই জায়গাটি ভ্রমণের সময় পরিবেশবান্ধব পর্যটনের কথা মাথায় রাখুন যাতে এটির নৈসর্গিক সৌন্দর্য ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য টিকে থাকে। এর পাশাপাশি পাখি ধরা কিংবা চুরি করাকে অবৈধ ঘোষণা করা উচিত এবং কড়া নজরদারির ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন।
কীভাবে যাবেন?
বাসে চড়ে সরাসরি সুনামগঞ্জে চলে যেতে পারবেন। এরপর একটি ভাড়া করা বাহন যোগাড় করে তাহিরপুর এমনকি সোলেমানপুর চলে যান। এরপর যোগাড় করুন গোলাবাড়ি অথবা অন্যান্য গ্রামে যাওয়ার জন্য একটি নৌকা।
আপনি যদি তাহিরপুরের বিখ্যাত শিমুল বাগান ঘুরে দেখতে চান তাহলে আপনার গন্তব্য একটু ভিন্ন হবে এবং ভ্রমণ পরিকল্পনাও সেভাবেই করতে হবে।
কোথায় থাকবেন?
বর্ষাকালে বজরা কিংবা ভাসমান বাহনের জন্য বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য ট্যুর কোম্পানি পাওয়া যায় যাদের মাধ্যমে টাঙ্গুয়ায় ঘুরে বেড়াতে পারবেন। বজরা অথবা অন্য কোনো হাউসবোটে রাতে নিরাপদেই থাকতে পারবেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম ভ্রমণ : যা কিছু জেনে নেয়া দরকার
তবে সুযোগ আছে পার্শ্ববর্তী গ্রামের কোনো ঘরে পেইং গেস্ট হিসেবে থাকারও। নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বেড়াতে গেলে খরচ একটু কম পড়বে। তবে দক্ষ ও অভিজ্ঞ ট্যুর অপারেটরের সহযোগিতা নিলে কিছুটা বাড়তি খরচ হলেও ভ্রমণ হবে তুলনামূলক বেশি নির্ঝঞ্ঝাট আর সেইসাথে ভালো গাইডের সেবাও পাবেন।
লেখক : সাইফুর রহমান তুহিন, সাংবাদিক ও ভ্রমণ লেখক।
আই নিউজ ভিডিও গ্যালারী
আশ্চর্য এন্টার্কটিকা মহাদেশের অজানা তথ্য | Antarctica continent countries | facts। Eye News
- সিলেট ট্রেনের সময়সূচি ২০২৩ দেখুন
- ঢাকা টু সিরাজগঞ্জ ট্রেনের সময়সূচী এবং ভাড়ার তালিকা
- চট্টগ্রাম টু ঢাকা ট্রেনের সময়সূচী এবং ভাড়ার তালিকা
- শীতকালে সিলেটের দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ
- ঢাকা টু পাবনা ট্রেনের তালিকা এবং সময়সূচী
- ‘লাসুবন’- শ্রীমঙ্গলে প্রাচীন গিরিখাতের সন্ধান!
- এবার মাল্টার ভিসা পাওয়া যাবে ঢাকা থেকেই!
- ঢাকা টু দিনাজপুর ট্রেনের সময়সূচী এবং ভাড়ার তালিকা ২০২৩
- টাঙ্গাইল টু ঢাকা ট্রেনের সময়সূচী এবং ভাড়া তালিকা
- ঘুরে আসুন ঝর্ণার স্বর্গ মিরসরাই সীতাকুণ্ডে