আমহদ সিরাজ
আপডেট: ২৩:০৬, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
মাঝেরছড়া ত্রিপুরী পল্লীতে একদিন
ইউএনও সিফাত উদ্দিনকে বরণ করে নিচ্ছে ত্রিপুরী যুবতীরা। ছবি- আই নিউজ
মাঝে মাঝে ভাবতে ইচ্ছা হয়, বাংলাদেশে অনেকগুলো বৈশিষ্ট যেন মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলা বহন বা স্পর্শ করে আছে। বাংলাদেশের সবগুলো উপজেলা বুঝে নিলেও কমলগঞ্জ উপজেলা একটা ভিন্ন মাত্রা চিহ্নিত করছে যেন। এখানে সমতল, অসমতল, পাহাড়, টিলা রাশি রাশি, নদী, নালা, ঝরনা, হাওর, বাওর, বিল ঝিল, লেক প্রভৃতিসহ জীববৈচিত্র্যের এমন সমাহার পড়ে আছে যে, দক্ষিণ এশিয়ায় তাকে চিহ্নিত করা যায়।
মাঝের ছড়া পল্লীতে ২২টি ত্রিপুরী পল্লীতে অনেকদিন ধরে বসবাস করছে। কমলগঞ্জ উপজেলায় তৈলং ছড়া, কালাছড়া সহ বেশ ক’টি পাহাড় ঘেষা, স্থানে তারা বসবাস করে থাকে। আদিবাসী হিসাবে ভাষা, সংস্কৃতির ইতিহাস ঐতিহ্যের বর্ণিল অবস্থান আছে তাদের, অভিবক্ত ভারতবর্ষে তাদের অবস্থান ছোট নয়; ভাষা সংস্কৃতির মানুষ হিসাবে তারা “ককবরক” ভাষায় কথা বলে।
পাশাপাশি এখানে ক্ষুদ্র ভাষা, আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অবস্থানও চোখে পড়ার মতো। বাংলাদেশে ৫০টির মতো চিহ্নিত আদিবাসীর অবস্থান আছে, তন্মেধ্যে ১৫টিরও বেশী ক্ষুদ্র ভাষার মানুষের অবস্থান আছে। এর মধ্যে চা বাগানে জাতিগোষ্ঠীর মানুষের সংখ্যা অগণন।
মোটাদাগে মণিপুরী (বিষ্ণুপ্রিয়া, মীতৈ ও পাঙন), খাসিয়া, ত্রিপুরী, মুন্ডা, গারো, সাওতাল, উরাং এর দৃশ্যমান অবস্থান থাকলেও কেবল মুণিপুরী ও খাসিয়াদের অবস্থান ছাড়া সকলের অবস্থান কষ্টকর- বেশীরভাগই হতদরিদ্র অবস্থায় জীবন যাপন করছে।
এখানে সদ্য যোগদান করা একজন ইউএনও সিফাত উদ্দিন, মহোদয়ের ইচ্ছে হয় তার হাতে থাকা কিছু খাদ্য সামগ্রী কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের মাঝেরছড়ার ২২টি ত্রিপুরী জনগোষ্ঠীর মাঝে বিতরণ করার। ২৭ শে আগস্ট ২০২২, শনিবার দিন সকাল ৯.৩০ টায়, খাদ্য সামগ্রীর প্যাকেট, তার গাড়ীর পেছনে বুঝাই করে কমলগঞ্জ উপজেলা থেকে ভানুগাছ হয়ে, মাধবপুর রাস্তা হয়ে, পদ্মছড়া বাগানের ভেতর দিয়ে প্রায় ৫ কিলোমিটার চলার পর, গাড়ী মাঝের ছড়ার কাছাকাছি সিএনজি স্টপেজে এসে থামে সামনে মাঝের ছড়ায় যেতে হলে, পায়ে হেটেও যেমন যাওয়া সহজ হয় না। তেমনি এ গাড়ীতেও সম্ভব নয়, লোকজনের সহযোগিতা নিয়ে একটি শক্ত জীপগাড়ি সংগ্রহ করে। তাতে মালামাল তুলে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে পাহাড়ী রাস্তায় রওয়ানা দেওয়া হয়। দুর্গম এবড়ো তেবড়ো ঝূকিপূর্ণ রাস্তা দিয়ে কোন রকম মাঝের ছড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে এসে পৌঁছা যায়, এ যেন ছোটখাটো অভিযানের মতো হয়ে উঠে।
মাঝের ছড়া পল্লীতে ২২টি ত্রিপুরী পল্লীতে অনেকদিন ধরে বসবাস করছে। কমলগঞ্জ উপজেলায় তৈলং ছড়া, কালাছড়া সহ বেশ ক’টি পাহাড় ঘেষা, স্থানে তারা বসবাস করে থাকে। আদিবাসী হিসাবে ভাষা, সংস্কৃতির ইতিহাস ঐতিহ্যের বর্ণিল অবস্থান আছে তাদের, অভিবক্ত ভারতবর্ষে তাদের অবস্থান ছোট নয়; ভাষা সংস্কৃতির মানুষ হিসাবে তারা “ককবরক” ভাষায় কথা বলে।
ককবরক একটা বিবেচ্য ভাষা হলেও এখানে তারা হতদরিদ্র জনগোষ্ঠী হিসাবে চোখের আড়ালে পড়ে আছে, নিজেদের মাঝে ঘরে এ ভাষায় কথা বললেও বাংলা ভাষাই বাহিরে তাদের নিত্যদিনের ভাষা। মাঝের ছড়ার পাশে পুরান বাড়ীসহ অপরাপর মানুষের বসবাস, জীবন ও জীবিকায় এখানে ২২টি ত্রিপুরী জনগোষ্টীর জমিজমা বলে কিছু নেই বললেই চলে। বসত ভিটার ঘর আছে, কিছু কিছু লেবু চাষই আয় রোজগারের সামান্য উৎস এসব বিক্রি করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে।
এখানে যোগাযোগ ব্যবস্থার এমন বেহাল অবস্থা যে, চাইলেই যখন তখন কেউ বের হওয়া সহজ নয়। যেটুকু চলাচলের রাস্তা আছে, তা এত আঁকাবাঁকা উঁচু নিচু যে, কোন বয়স্কজনের চলাচল সম্ভব হয়ে উঠে না। স্কুলগামী ছেলে মেয়ে সব সময় স্কুলে যেতে পারে না। বৃষ্টি হলে চলাচল অসম্ভব হয়ে পড়ে। বিশেষত যে কটি পুল কালভার্ট আছে তা ভঙ্গুর ও নাজুক। বৃষ্টি হলে লেবু বাইরে নিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। অনেক সময় লেবু পচে নষ্ট হয়ে যায়, যোগাযোগ না থাকার কারণে। সন্তান সম্ভবা মহিলাদের হাসপাতালে নেওয়া এক অকল্পনীয় দুর্দশা। হাতে গুনা মাত্র ক’টি টিউবওয়েল আছে, বিশুদ্ধ পানীয় জলের সমস্যা; যোগাযোগ ব্যবস্থা ভঙ্গুর। সরকারেরও যে সমস্ত সুযোগ সুবিধা আছে, তার খবরাখবরও তাদের জানা থাকে না অনেকটাই।
সরজমিনে এসে ইউএনও সিফাত উদ্দিন এসব শুনে যেন হতবাক এবং “হঠাৎ আলোর ঝলকানির মতো” উপজেলার এমন বড় অফিসারকে দেখে ত্রিপুরীরাও হতবাক। নারী পুরুষরা ফুলের পাপড়ী নিয়ে উপস্থিত হয়েছেন। তাদের ভাষায় উপজেলার কোন বড় অফিসার এসে খাদ্য সামগ্রী এইভাবে তুলে দেওয়া তাদের আনন্দিত ও বিস্মিত করেছে।
এটা সত্য যে, আমাদের উন্নয়নের গতি প্রকৃতি গতানুগতিক। প্রকল্পের পর প্রকল্পে হয় বটে, এ উন্নয়ন অনেক সময় প্রকল্প বুঝে মানুষ বুঝে না। ফলে আমাদের উন্নয়নের কারিগর জনগন, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন, এর সামঞ্জস্য অবস্থান থাকে না। প্রশাসন ছকের ভেতর থেকে ছকে এক জায়গায় থেকে আরেক জায়গায় অবস্থান করে। প্রশাসনের প্রধানেরা মাছি মারা কেরাণী নন। কিন্তু অনেকে তাই থেকে যান। যার ফলে মানুষের দুর্দশা কমে না। এর বাহিরে যারা আসতে সক্ষম হয়েছেন তারা মানুষের দুঃখের সকালে ও বিকালে ভিন্ন মাত্রা তৈরী করেছেন।
এখানে ছকের বাইরে আসা একজন ইউএনও সিফাত উদ্দিনকে পেয়ে প্রাণখোলে কথা বলেন পীযুষ দেববর্মা, রাধামোহন দেববর্মা, রাম কুমার দেববর্মা, নিরঞ্জন দেববর্মা, দেবেন্দ্র দেববর্মা প্রমুখ। ইউএনও সিফাত উদ্দিন আন্তরিকতার সঙ্গে তাদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস রাখেন। তিনি উচ্চপ্রশাসনিক পদ বহন করে বটে কিন্তু তারও একটা পাবলিক মন আছে। মাঝের ছড়ার ত্রিপুরী পল্লীতে একটা ভিন্নতর অনুভূতি আমাদের তাড়িত করে।
লেখক: আহমদ সিরাজ, লোকগবেষক ও প্রাবন্ধিক
আইনিউজ/এইচএ
দেখুন আইনিউজের ভিডিও গ্যালারি
দিনমজুর বাবার ছেলে মাহির বুয়েটে পড়ার সুযোগ || BUET success story of Mahfujur Rhaman || EYE NEWS
- সিলেট ট্রেনের সময়সূচি ২০২৩ দেখুন
- ঢাকা টু সিরাজগঞ্জ ট্রেনের সময়সূচী এবং ভাড়ার তালিকা
- চট্টগ্রাম টু ঢাকা ট্রেনের সময়সূচী এবং ভাড়ার তালিকা
- শীতকালে সিলেটের দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ
- ঢাকা টু পাবনা ট্রেনের তালিকা এবং সময়সূচী
- ‘লাসুবন’- শ্রীমঙ্গলে প্রাচীন গিরিখাতের সন্ধান!
- এবার মাল্টার ভিসা পাওয়া যাবে ঢাকা থেকেই!
- ঢাকা টু দিনাজপুর ট্রেনের সময়সূচী এবং ভাড়ার তালিকা ২০২৩
- টাঙ্গাইল টু ঢাকা ট্রেনের সময়সূচী এবং ভাড়া তালিকা
- ঘুরে আসুন ঝর্ণার স্বর্গ মিরসরাই সীতাকুণ্ডে