ইমরান আল মামুন
আপডেট: ২১:৫৬, ২৮ জুন ২০২৩
এক নজরে ময়মনসিংহ জেলা এবং দর্শনীয় স্থান
প্রিয় ময়মনসিংবাসীর জন্য রয়েছে আজকের আর্টিকেলে এক নজরে ময়মনসিংহ জেলা এবং দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে। যারা ময়মনসিংহে অবস্থান করছে তাদের এ বিষয়গুলো মোটামুটি জানা রয়েছে আর যারা জানেন না তারা আমাদের এই আর্টিকেল থেকে পুরো ময়মনসিংহ সম্পর্কে জেনে নিন। আসুন তাহলে আজকের আর্টিকেলে দেখে নেই ময়মনসিংহের সকল দর্শনীয় স্থানগুলো সহ আরো অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সকল তথ্যগুলো।
পূর্বে শুধুমাত্র ময়মনসিংহ হয়েছিল একটি জেলা। বেশ কয়েক বছর আগে একে করা হয়েছে বিভাগ। তবে আজকে শুধু আমরা জানবো এই ময়মনসিংহ জেলার বিভিন্ন তথ্যভাণ্ডার সম্পর্কে। যা বাংলাদেশের সকল মানুষের জানা উচিত। বিশেষ করে যারা ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন তাদের জন্য আজকের আর্টিকেলটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো ময়মনসিংহ হচ্ছে আধুনিক ছোঁয়ায় অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ঘেরা। এখানে যেমন রয়েছে বিস্তৃত সমতল ভূমি তেমনভাবে রয়েছে পাহাড়ি অঞ্চলগুলো। যা আপনাকে মনোমুগ্ধ করে তুলবে। এই অঞ্চলে বসবাস করে দেশের সুনামধন্য বিশেষ ব্যক্তিবর্গ এবং রয়েছে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান। যেখানে প্রতিবছর সারা বাংলাদেশ থেকে লোক ভ্রমণ করে থাকেন। আমরা এই জেলা সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা নেব।
এক নজরে ময়মনসিংহ জেলা এবং দর্শনীয় স্থান
ময়মনসিংহের ইতিহাস
সৃষ্টির শুরু থেকে এর নাম ময়মনসিংহ ছিল না। মধ্যযুগে এ অঞ্চলটির নাম ছিল মোমেনশাহী। এরপর ষোড়শ শতাব্দীতে বাংলার স্বাধীন সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহ এর পুত্র নাসির উদ্দিন নসরত শাহ একটি নতুন রাজ্য তৈরি করেন। তখন এর নামকরণ করা হয় নাসির বাদ। পরবর্তী সময়ে এ নামের পরিবর্তন হয়ে তৈরি করা হয় ময়মনসিংহ। যা বর্তমান সময় পর্যন্ত ময়মনসিংহ নামে পরিচিত লাভ করেছে।
সর্বপ্রথম ১লা মে ১৭৮৭ সালে ময়মনসিংহকে জেলা হিসেবে পরিচিতি দেওয়া হয়েছে। এরপর ১৯৬৯ সালে ময়মনসিংহ কে জেলা থেকে টাঙ্গাইল এবং জামালপুর মহাকুমা পৃথক জেলায় উন্নীত করা হয়। এরপর ১৯৮৪ সালে ময়মনসিংহ জেলা থেকে শেরপুর, নেত্রকোনা এবং কিশোরগঞ্জকে পৃথক করা হয়েছিল। বর্তমানে ময়মনসিংহ হচ্ছে একটি বিভাগ।
ভৌগলিক অবস্থান
ময়মনসিংহ জেলার উত্তরের রয়েছে ভারতের মেঘালয় এবং গারো পাহাড়, দক্ষিণের হয়েছে গাজীপুর জেলা, পূর্ব দিকে অবস্থান করছে কিশোরগঞ্জ এবং নেত্রকোনা আর পশ্চিমে রয়েছে জামালপুর, টাঙ্গাইল এবং শেরপুরের কিছু অংশ। অর্থাৎ জামালপুরের একটি অংশ হচ্ছে ভারতের কোল ঘেঁষে অর্থাৎ বাংলাদেশের শেষ সীমান্তে অবস্থিত। আয়তনের দিক থেকে ময়মনসিংহের আয়তন হচ্ছে ৪ হাজার ৩৬৩ কিলো বর্গ কিলোমিটার।
ময়মনসিংহের জনসংখ্যা কত এবং প্রশাসনিক এলাকা
আপনি যদি এক নজরে ময়মনসিংহ জেলা সম্পর্কে জানতে চান তাহলে প্রথমে আসবে ময়মনসিংহ এর জনসংখ্যা সম্পর্কে। সর্বশেষ আদমশুমারি অনুযায়ী ৫ লক্ষ ৭৬ হাজার ৭২২ জন।
- পুরুষ সংখ্যা হচ্ছে ৭২.১৪ %
- নারী সংখ্যা হচ্ছে ৬৯.৪১%
- জনসংখ্যা ঘনত্ব হার হচ্ছে প্রতি কিলোমিটারে ১৩৪২ জন
- ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সংখ্যা হচ্ছে ২৭ হাজার ৬৫২ জন
জনসংখ্যার দিকে ময়মনসিংহে প্রচুর লোক বসবাস করে। ঠিক তেমন ভাবে এর মধ্যে রয়েছে প্রচুর দর্শনীয় স্থান এবং প্রাকৃতিক সম্পদ। ময়মনসিংহ শহরে রয়েছে প্রায় ২২টি নদী যার মোট আয়তন হচ্ছে ১১৪৫ হেক্টর। প্রধান সকল বিল এবং প্লাবন ভূমির সংখ্যা ১১৪০ টি।
ময়মনসিংহের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ভরপুরের পাশাপাশি ময়মনসিংহ শিক্ষার হার দিক থেকে অনেক এগিয়ে। ময়মনসিংহের শিক্ষার হার হচ্ছে ৬৮% । আর সাক্ষরতার হার হচ্ছে ৭০.৭৪ শতাংশ। জালের মত ছড়িয়ে রয়েছে প্রত্যেকটি শহরে এবং প্রত্যেকটি অসংখ্য প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থা। আসুন দেখে নেই ময়মনসিংহের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সম্পর্কে যাবতীয় সকল বিষয়গুলো।
- মোট প্রাথমিক বিদ্যালয় সংখ্যা হচ্ছে ২৬৮৯ টি
- মোট উচ্চ বিদ্যালয় হচ্ছে ৫৬ টি
- কিন্ডারগার্ডেন হচ্ছে ১২৬ টি
- ইবতেদায়ী মাদ্রাসা ২৩৪টি
- উচ্চ মাধ্যমিক মাদ্রাসা ২৪৩ টি
- কমিউনিটি ক্লিনিক ১১৪ টি
- নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১০৫ টি
- মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৪০৪ টি
- স্কুল এন্ড কলেজ ১৩ টি
- উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩১ টি
- ডিগ্রী কলেজ ২৭ টি
- বিশ্ববিদ্যালয় ২ টি
- মেডিকেল কলেজ ২ টি
- ক্যাডেট কলেজ একটি
- ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ১টি
- মাদ্রাসা ২৯৫ টি
- আর্ট স্কুল ১ টি
- ফাজিল মাদ্রাসা ৪৭ টি
এক নজরে ময়মনসিংহ জেলার কৃষি ও শিল্প কারখানা
ময়মনসিংহ জেলা হচ্ছে কৃষিভিত্তিক একটি অঞ্চল। এখানে মোট জমির সংখ্যা হচ্ছে ৪ লক্ষ ৩৬ হাজার ৩৪৮ হেক্টর। যার মধ্যে ফসলিস জমি হচ্ছে ৩ লক্ষ ৭২ হাজার ৭০৭ হেক্টর। ফসল জমির নিবিড়তা হচ্ছে ২১২%. কৃষি ব্লকের সংখ্যা ৫২৫টি এবং কৃষি বিষয়ক পরামর্শ কেন্দ্র ২৯০ টি। এ সকল জমিতে গভীর নলকূপ এর মাধ্যমে পানি শেষ করা হয়ে থাকে। যার মধ্যে অধিকাংশ হচ্ছে বিদ্যুৎ চালিত এবং ডিজেল চালিত নলকূপ।
ময়মনসিংহ শহরে রয়েছে বেশ কয়েকটি বৃহৎ কারখানা। সবচেয়ে বৃহৎ কারখানা হচ্ছে তিনটি। আর মাঝারি এবং ক্ষুদ্র শিল্প কলকারখানা হচ্ছে ১৪১ টি। ৫০ টি কলকারখানা শুধুমাত্র ভালুকাতেই অবস্থিত।
ময়মনসিংহের হাসপাতালের তালিকা
ময়মনসিংহ চিকিৎসার দিক থেকে অন্যান্য জেলার চেয়ে বেশ এগিয়ে রয়েছে। অর্থাৎ অন্যান্য জেলার মানুষ এখানে আসে চিকিৎসা গ্রহণের জন্য। আসুন দেখে নেই এখানে কতটি কোন হাসপাতাল রয়েছে সেটি।
- মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সংখ্যা হচ্ছে ২ টি
- সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল ১ টি
- বক্ষ ব্যাধি ক্লিনিক ১টি
- উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১১ টি
- পরিবার কল্যাণকেন্দ্র ৮৬ টি
- কমিউনিটি ক্লিনিক ৪১২টি
- বিদ্যালয় স্বাস্থ্য কেন্দ্র ১টি
- বেসরকারি ক্লিনিক ৭২ টি
- সরকারি অ্যাম্বুলেন্স ১৬টি
এক নজরে ময়মনসিংহ জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা
যোগাযোগের অবস্থান থেকে ময়মনসিংহ আরও বেশি উন্নত। পাকা সড়কের পরিমাণ হচ্ছে ৯৬৪ কিলোমিটার এবং কাঁচা সড়ক হচ্ছে ৭৮৫৮ কিলোমিটার। ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ জেলার মোট দূরত্ব হচ্ছে ১২১ কিলোমিটার যা সম্পূর্ণ পাকা এবং ট্রেনের দূরত্ব হচ্ছে ১২৩ কিলোমিটার। ঢাকা টু ময়মনসিংহ ট্রেনের সময়সূচী জানতে আমাদের ভ্রমণ ক্যাটাগরি দেখুন। ঢাকা সহ অন্যান্য জেলা গুলোতে সড়ক পথ এবং রেল যোগাযোগের মাধ্যমেও যে কেউ ভ্রমণ করতে পারবে।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান
ধর্মীয় দিক থেকেও ময়মনসিংহ জেলা রয়েছে আরো এগিয়ে। এখানে সকল ধর্মের লোক বসবাস করে। এখানে প্রত্যেকটি ধর্ম পালনের জন্য আলাদা আলাদা উপাসনালয় রয়েছে প্রত্যেকটি এলাকাগুলোতে।
- মোট মসজিদ সংখ্যা হচ্ছে ১০ হাজার ৪৯০ টি
- মোট মাজার হচ্ছে ২১৭ টি
- মোট মন্দির হচ্ছে ৪১৫ টি
- মোট গির্জা সংখ্যা ৭৯টি
ময়মনসিংহ নির্বাচন
ময়মনসিংহ জেলার নির্বাচন এলাকা হচ্ছে ১৪৬ থেকে ১৫৬ টি। অন্যান্য জেলার মতো এখানে সকল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এখানেও সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ
- উপজেলা ভূমি অফিস রয়েছে ১৩ টি
- ইউনিয়ন ভূমি অফিস ১১৪ টি
- ভেটেনারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ১টি
- প্রাইমারি শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ১টি
- উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ১টি
- ন্যাশনাল অফ প্রাইমারি এডুকেশন ১টি
- সিডিউল বাণিজ্যিক ব্যাংক ৮০ টি
- খাদ্য গুদাম ১৮টি
- হাট বাজার ৫৭১ টি
- জাদুঘর ২টি
- সিনেমা হল ৩২ টি
- পার্ক ৩টি
- স্টেডিয়াম ৩টি
- খেলার মাঠ ১১৮টি
ময়মনসিংহের দর্শনীয় স্থান
- কালু শাহ্ কালশার দিঘী
- নজরুল স্মৃতি যাদুঘর
- শহীদ আব্দুল জব্বার জাদুঘর
- কাদিগড় জাতীয় উদ্যান
- বোটানিক্যাল গার্ডেন
- শশী লজ
- রামগোপালপুর জমিদার বাড়ি
- গারো পাহাড়
- চীনা মাটির টিলা
- দূর্গাবাড়ী
- গৌরীপুর লজ
- সার্কিট হাউজ
- সিলভার ক্যাসল
- বিপিন পার্ক
- কেল্লা তাজপুর
- আলাদীন'স পার্ক
- তেপান্তর সুটিং স্পট
- ময়মনসিংহ টাউন হল
- কুমির খামার
- বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
- জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়
- ময়মনসিংহ জিলা স্কুল
- মুক্তাগাছার রাজবাড়ী
- আলেকজান্ডার ক্যাসল
- রাজ রাজেশ্বরী ওয়াটার ওয়ার্ক
- গৌরীপুর জমিদার বাড়ি
- আঠারো বাড়ি জমিদার বাড়ি
- রাজিবপুর জমিদার বাড়ি
- ময়মনসিংহ জাদুঘর
- বৈলর জমিদার বাড়ি, বৈলর ইউনিয়ন
- শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালা
- পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদী
উপরে আমরা জানলাম এক নজরে ময়মনসিংহ জেলা সম্পর্কে। এখন আমরা এর দর্শনীয় স্থানগুলো সম্পর্কে জানব। যেখানে প্রতিবছর অনেক মানুষ ভ্রমণ করে থাকে। আসুন দেখে নেই এ সকল জায়গা সম্পর্কে।
আজকের এই আর্টিকেল মাধ্যমে আমরা দেখলাম এক নজরে ময়মনসিংহ জেলা এবং এর দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে। আরো অন্যান্য জেলা সম্পর্কে জানতে আমাদের সঙ্গে থাকুন। ( Source : Mymensingh gov)
- সিলেট ট্রেনের সময়সূচি ২০২৩ দেখুন
- ঢাকা টু সিরাজগঞ্জ ট্রেনের সময়সূচী এবং ভাড়ার তালিকা
- চট্টগ্রাম টু ঢাকা ট্রেনের সময়সূচী এবং ভাড়ার তালিকা
- শীতকালে সিলেটের দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ
- ঢাকা টু পাবনা ট্রেনের তালিকা এবং সময়সূচী
- এবার মাল্টার ভিসা পাওয়া যাবে ঢাকা থেকেই!
- ‘লাসুবন’- শ্রীমঙ্গলে প্রাচীন গিরিখাতের সন্ধান!
- টাঙ্গাইল টু ঢাকা ট্রেনের সময়সূচী এবং ভাড়া তালিকা
- ঢাকা টু দিনাজপুর ট্রেনের সময়সূচী এবং ভাড়ার তালিকা ২০২৩
- যশোর টু ঢাকা ট্রেনের সময়সূচী এবং ভাড়ার তালিকা