মো. রওশান উজ্জামান রনি
আপডেট: ১৭:১৫, ১৬ জুলাই ২০২৩
জাপান সম্পর্কে অজানা তথ্য | Interesting facts about Japan
চীন, ফিলিপাইন, কোরিয়া, নিউগিনি, বার্মা এই সব দেশগুলো জাপানের দখলে ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে একটি ভুল জাপানকে হারতে বাধ্য করেছে। আমেরিকা সেই পার্ল হারবার হামলার পর থেকে শুরু হয় জাপানের অন্ধকার সময়। যখন জাপানের দুটি শহরে প্রায় দুই লক্ষ মানুষের সরাসরি মৃত্যু হয়। শেষ পর্যন্ত বিনা শর্তে হার মেনে নিতে বাধ্য হয় জাপান। আই নিউজের আজকের প্রতিবেদনে পড়ুন Interesting facts about Japan? সম্পর্কে।
জাপানের নাগরিকরা শুরু থেকে ডিসিপ্লিন ছিল। তাদের পরিশ্রম এবং আত্মবিশ্বাসী জাপান কেউ উন্নত করেছিল। কিন্তু আমেরিকা সেই সময় যেভাবে প্যাসিফিক রিজনে কমিউনিজম আটকানোর জন্য জাপানকে সাহায্য করেছিল। তার ঠিক উল্টোটা তারা করেছিল...
তবে শেষ কিন্তু এখানে হয়নি। এই সময় জাপানের অর্থ ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছিল। খাদ্যের অভাব থেকে শুরু করে বেকারত্ব। কল কারখানা হসপিটাল যুদ্ধের জন্য প্রায় সব কিছুই ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। কোন ভাবেই জাপান আর উঠে দাঁড়ানোর মত অবস্থায় ছিল না। এমনকি পশ্চিমী দেশগুলো চাপে জাপান তাদের আর্মি নতুন করে তৈরি করতে পারেনি। কেউ ভাবতে পারেনি যে জাপান আবার উন্নত হতে পারবে।
আমেরিকার ইকোনমিস্ট মিল্টন ফ্রিডম্যান একবার বলেছিলেন, যদি কোন দেশকে তুমি দ্রুত উন্নত করতে চাও তাহলে সেই দেশে বোমাবর্ষণ কর। আর এই কথাটা যে কতটা সত্যি তার জলজ্যান্ত উদাহরণ হল জাপান। কারণ ১৯৪৫ সালে সেই পারমাণবিক হামলার পর মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে জাপান এমন কিছু করেছিল যে জাপান হয়ে যায় পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ।
এমনকি আজও জাপান ফোর পয়েন্ট নাইন ট্রিলিয়ন ডলারের ইকোনমি নিয়ে সারা বিশ্বের মধ্যে সবথেকে ধনী দেশের তালিকায় তিন নম্বরে আছে। এবার প্রশ্ন হল এটা কিভাবে হলো? কিভাবে জাপান ঘুরে দাঁড়িয়েছিল? আপনি জানলে অবাক হবেন, যে আমেরিকা জাপানকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দিতে চেয়েছিল সেই আমেরিকায় আবার সাহায্য করেছিল জাপানকে উঠে দাঁড়াতে। কিন্তু আপনারা জানেন যে আমেরিকা নিজের স্বার্থ ছাড়া এক পাও এগোবে না। তাহলে জাপানের মধ্যে একটা দেশ, যারা কিনা আমেরিকার উপর হামলা করেছিল সেই আমেরিকা কেন জাপানের সাহায্য করতে এগিয়ে আসলো। আমেরিকার আসল স্বার্থ কি ছিল? আর জাপান কেনই বা তাদের উপর হওয়া পারমাণবিক হামলা কখনো বদলা নেওয়ার চেষ্টা করেনি? আজ জানাবো জাপান কিভাবে জিরো থেকে হিরো হল সেই ইতিহাস।
হিরোশিমা নাগাসাকি পারমাণবিক হামলার পর জাপান বুঝে গিয়েছিল এই যুদ্ধে তাদের হার নিশ্চিত। ১৯৪৫ সালে ১৫ই আগস্ট জাপান মিত্র পক্ষ অর্থাৎ আমেরিকা, ব্রিটেন ও সবীয়েত ইউনিয়নের সামনে আত্মসমর্পণ করে। আর জাপানের সম্পূর্ণ দখল চলে আসে আমেরিকার হাতে। এই ৬ বছর ধরে চলা যুদ্ধে জাপানের প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয় এবং প্রায় ৫৬ বিলিয়ন ডলারের সম্পত্তি নষ্ট হয়। সেই সময় জাপানের সাধারণ মানুষ খুব দুর্দশার মধ্যে ছিল। একে তো হিরোশিমার নাগাসাকি মত বড় বড় দুটো শহর পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। এদিকে টোকিও সহ বাকি শহর গুলোর অবস্থা খুব খারাপ ছিল। জাপানের সাধারণ মানুষের কাছে না ছিল রোজগার না ছিল খাদ্য। দিন দিন জাপান একটা মৃত রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছিল। যখন কোন দেশ বা রাজ্য যুদ্ধে হেরে যায় তখন সেই দেশের সাধারণ মানুষ বা অর্থনীতির কথা কেউ ভাবে না। আমেরিকা সহ মিত্র দেশগুলো কিন্তু জাপানের কথা ভাবেনি। তাদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল জাপানের সাথে এমন কিছু করা যাতে জাপান আর কখনো যুদ্ধ করতে না পারে। জাপানকে একদম কমজোরি করে দেওয়া। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে হারের পর জার্মানির উপর অনেক পরিমাণ ঋণের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এমনকি বিশ্বব্যাপী জার্মানিদেরকে অনেক অপমান করা হয়েছিল। যে অপমানের বদলা নিতে জার্মানি আবার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা করেছিল।
এই একই ঘটনা যাতে জাপানের সাথে না হয় এই বিষয় নিয়ে মিত্র পক্ষ চিন্তায় ছিল। তাই জাপানের এই আত্মসমর্পণ এবং ভবিষ্যতে জাপানের সাথে কি করা হবে সেগুলো সম্পূর্ণ দায়িত্ব ছিল জেনারেল ডগলাস ম্যাক আখতারের উপর। এই ডগলাসের নির্দেশে প্রথম একটা ইন্টারন্যাশনাল ট্রাইবুনাল তৈরি করা হয়।
যে সমস্ত যুদ্ধাপরাধী ছিল তাদের শাস্তি দেওয়ার জন্য। জাপানের যুদ্ধকালীন প্রধানমন্ত্রী তেজো সহ আরো প্রায় 6 জনকে ফাঁসি দেওয়া হয়। জাপানের রাজতন্ত্রকে ভেঙে ফেলা হয়। জাপানে নিয়ে আসা হয় গণতন্ত্র। যাতে দেশের জনগণ নিজেদের পছন্দমত প্রার্থীকে বেছে নিতে পারে শাসন চালানোর জন্য। এমনকি নতুন করে জাপানের সংবিধান লেখা হয়। এই সংবিধানের আর্টিকেল নয়ে উল্লেখ করা হয়, জাপান কখনো যুদ্ধের জন্য সৈন্যবাহিনী তৈরি করতে পারবে না। এছাড়া জাপানের সমস্ত গোলাবারুদ তৈরির কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর যুদ্ধের সময় উঁচু পদে থাকার সমস্ত ব্যক্তিদের তাদের পথ থেকে সরিয়ে ফেলা হয়। এইতো গেল জাপানের আত্মসমর্পণের প্রক্রিয়া। কিন্তু ঠিক একই মুহূর্তে জাপানের অর্থনীতি পুরোপুরি ভেঙে পড়েছিল। দেশের এক্সপোর্ট একেবারে শূন্যের কাছে এসে পৌঁছায়।
১৯৪৫ থেকে ১৯৫০ সালের মধ্যে জাপানের জিডিপি ছিল মাত্র দশ বিলিয়ন ডলার। আর এই জিডিপি গ্রোথ প্রতি বছর নেগেটিভ হচ্ছিল। এই সময় কিন্তু আমেরিকা বা অন্যান্য মৃত্যু দেশগুলো জাপানের অর্থনীতি নিয়ে বিন্দুমাত্র ভাবছিল না। তারা জাপানকে সেই খারাপ অবস্থায় ছেড়ে দিয়েছে। সবাই যখন জাপানের উপর থেকে আশা ছেড়ে দিয়েছিল ঠিক সেই সময় আমেরিকা আবার জাপানের অর্থনীতিকে বাঁচিয়ে তুলতে শুরু করে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার সাথে সাথে আমেরিকা এবং রাশিয়ার মধ্যে কোল্ডোয়া শুরু হয়। রাশিয়া তখন চাইছিল সারা বিশ্বের কমিউনিজম ছড়াতে। অন্যদিকে আমেরিকা চাইছে ক্যাপিটাল রিলিজন এবং ডেমোক্রেসি কে প্রমোট করতে। দ্বীতীয় বিশ্ব যুদ্ধেরপর আমেরিকার লক্ষ্য করে সোভিয়েত ইউনিয়ন ধীরে ধীরে এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোতে কমিউনিজমের বিস্তার করছে। চীনে ততদিনে মাওজীডনের কমিউনিস্ট শাসন শুরু হয়ে যায়। কুরিয়ায় কমিউনিস্ট চিন্তাধারা বৃদ্ধি পাচ্ছিল। আমেরিকা দেখে যদি এভাবেই চলতে থাকে তাহলে প্যাসিফিক রিজনে কোন এলাই থাকবে না। তাই আমিরিকা চাচ্ছিল এই প্যাসিফিক রিজেন একটা শক্তিশালী মিত্র দেশ। আর তারা সেই সময় ফোকাস করে জাপানের উপরে। তারা জাপানকে এতটা উন্নত করতে চেয়েছিল যাতে জাপান ডেমোক্রেসির একটা উৎকৃষ্ট উদাহরণ হয়ে দাঁড়ায়। এবং প্যাসিফিক রিজনে কমিউনিস্টের যে বিস্তার হচ্ছে তার সামনে একটা বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ১৯৪৯ থেকে ১৯৫৩ সাল এই চার বছরের মধ্যে জাপানের ইন্ডাস্ট্রি এতটা গ্রো করে যেমনটা জাপান ১৯৩৭ সালের যুদ্ধের আগে ছিল। এই সময় দেশের রোজগার বাড়তে থাকে। সাথে জাপানিদের জীবন যাত্রার উন্নতি হয়।
আমেরিকা জাপানকে কীভাবে সাহায্য করেছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে জাপানের অর্থনীতির একটা বড় অংশ আসত কৃষিকাজ থেকে। তাই অর্থনীতিকে আবার শক্তিশালী করতে গেলে এই কৃষি কাজের উপর জোর দেওয়াটা বেশি দরকার ছিল।
কেননা সেই সময় জাপানের বেশিরভাগ কর্মসংস্থান হত এই কৃষিকাজ থেকে। তবে কৃষি ব্যবস্থাকে উন্নত করার সামনে একটা সমস্যা ছিল। সে সময় জাপানে এক ধরনের জমিদারি প্রথা ছিল। যেখানে ধনী ব্যক্তিদের শহরে বসবাস করত। আর তাদের দখলে থাকা জমি তারা গরীব চাষীদের ভাড়ায় দিত। এর ফলে চাষিরা নিজেদের পছন্দমত চাষাবাদ করতে পারত না। যার কারণে ফসলের উৎপাদন সীমিত হতো। আমেরিকা যখন জাপানের অর্থনীতিকে নতুন করে তৈরি করার পরিকল্পনা করে তারা প্রথমে জাপানে একটি ল্যান্ড রিফর্ম আইন পাস করে। এতে চাষীদের কে সেই সমস্ত চাষের জমি বিক্রি করা হয়।
যে জমিদারা এতদিন ভাড়া নিয়ে চাষ করত। ফলে এবার চাষিরা নিজেদের পছন্দমত চাষাবাদ করতে শুরু করে। এছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের আর্থিক সহায়তা করা হয়। চাষাবাদে ইন্ট্রোডিউস করা হয় আমেরিকান টেকনোলজি। ফলে কয়েক বছরের মধ্যে জাপানের এগ্রিকালচার সেক্টর খুব তাড়াতাড়ি গ্রো করতে শুরু করে। তবে জাপান কি উন্নত করতে গেলে শুধুমাত্র কৃষি কাজের উপর ভরসা করলে চলতো না দরকার ছিল ইন্ডাস্ট্রি। কিন্তু এখানেও একতার সমস্যা ছিল। জাপানে আগে যে সমস্ত কলকারখানা ছিল সেগুলো যুদ্ধের কারণে বেশিরভাগই প্রায় ধ্বংস হয়ে যায়। কারণ যুদ্ধের সময় মিত্রপক্ষের সেনারা এই ইন্ডাস্ট্রিয়াল এরিয়া গুলোতে বোম্বিং করতো। যাতে যুদ্ধের সময় জাপানের সৈন্যদের কাছে রসদ পৌঁছাতে না পারে। তবে এর পরেও জাপানে যে সমস্ত কলকারখানা ছিল সেগুলোকে কন্ট্রোল করতে ধনী ব্যক্তিরা। যেটাকে জাইবাতসু বলা হয়। এই জাইবাতসু জাপানের রাজনীতি, অর্থনীতি সবকিছুকে কন্ট্রোল করত। সেই সময় আমেরিকা আর জাপানের সরকার মিলে এই জাইবাতসু সিস্টেমকে পুরোপুরি নস্ট করে দেয়।
আমেরিকা সেসময় জাপানকে প্রায় 2.2 বিলিয়ন ডলারের আর্থিক সহায়তা করে। যাতে জাপানের নতুন করে ইন্ডাস্ট্রি তৈরি হতে পারে। সাথে নিয়ে আসা হয় আমেরিকান টেকনোলজি। যেহেতু যুদ্বের কারণে বেশিরভাগ কলকারখানা প্রায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। তাই নতুন টেকনোলজি এখানে ইমপ্লিমেন্ট করা খুব সহজ ছিল। কিন্তু সেই ইন্ডাস্ট্রিতে তৈরি হওয়া প্রোডাক্ট গুলো বিক্রির জন্য একটা মার্কেটের দরকার। আর যেহেতু সেই সময় জাপানের অর্থনীতি খুব দুর্বল ছিল তাই আমেরিকা নিজেদের মার্কেট জাপানের জন্য খুলে দেয়। আর জাপানিজ প্রোডাক্ট ধীরে ধীরে আমেরিকায় প্রবেশ করতে শুরু করে। আর দিন দিন জাপানের এক্সপোর্ট বাড়তে থাকে। এই সময় জাপানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন শিজুর ইউসিসিদা। তিনি সেই সময় জাপানের আমেরিকার মধ্যে একটা ভালো সম্পর্ক তৈরি করার জন্য জোশিরা ডক্ট্রিন ইমপ্লিমেন্ট করেন। এতে আমেরিকা জাপানকে সম্পূর্ণরূপে প্রটেকশন দেয়। যে জাপানের উপর হামলা হওয়া মানে আমেরিকার উপর হামলা হওয়া। ফলে জাপান সে সময় নিজেদের শৈলশক্তি বৃদ্ধির বদলে জোর দেয় অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার পেছনে।
এছাড়া আমেরিকার সাথে ক্লোজ কো-অপারেশন এর ফলে শিজুর ইউসিসিদা সেই সময় জাপানে থাকে ইন্ডাস্ট্রিগুলো্কে বিশ্বমানের গড়ে তোলার জন্য একটি আলাদা মিনিস্ট্রি তৈরি করেন। Ministry of International Trade and industry (MITI). জাপানের যে সমস্ত ইন্ডাস্ট্রি ছিল তাদের এক্সপোর্ট এর উপর ইনসেন্টিভ দিতে শুরু করে আর ব্যাংক থেকে ইন্ডাস্ট্রি গুলোকে অল্পসুদের লোন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। ফলে ইন্ডাস্ট্রিগুলো আরও বেশি করে ইনভেস্ট করতে শুরু করে। এবার ইন্ডাস্ট্রি যদি বিশ্বমানের করতে হয় তাহলে সেখানে কাজ করা লেবারদেরও উন্নত মানের প্রশিক্ষণ দেওয়া দরকার। এই কারণে জাপানের শিক্ষা ব্যবস্থায় ইঞ্জিনিয়ারিং কে বেশি পরিমাণে গুরুত্ব দেওয়া হয়। যাতে ধীরে ধীরে জাপানি কোয়ালিটি লেবারের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। এই লেবারে যাতে আরো বেশি পরিমাণে ইন্ডাস্ট্রিকে গ্রো করতে হেল্প করে এই জন্য তাদের দেওয়া হয় লাইফ টাইম এমপ্লয়মেন্ট গ্যারান্টি। যার ফলে তারা চাকরি সুরক্ষা পায়। এছাড়া নিয়ে আসা হয় ইনসেন্টিভ সিস্টেম যাতে একজন ওয়ার্কার শুধুমাত্র স্যালারি নয় বেশি কাজ করে ইনসেন্টিভও পায়। এতে শ্রমিকরা বেশি সময় পর্যন্ত কাজ করতে শুরু করে। আর রয়েল এমপ্লয়ীদের মাধ্যমে ইন্ডাস্ট্রির গ্রত বাড়তে থাকে।
আপনি ভাবতে পারেন এগুলো যে কোন দেশ করতে পারে এখানে জাপান আলাদা কি করলো। এবার আপনাদেরকে সেই বিষয়ে বলব। যে সময় আমেরিকা জাপানকে একটি ইকোনমিক সুপার পাওয়ার তৈরি করতে চেয়েছিল। ঠিক সেই সময় অর্থাৎ ১৯৫০ থেকে ১৯৫৩ সালের মধ্যে হয়েছিল কোরিয়ান যুদ্ধ। এই যুদ্ধে ইউনাইটেড নেশনস এর সেনারা নিজেদের ঘাঁটি হিসেবে জাপানকে বেছে নিয়েছিল। আর যুদ্ধকালীন তাদের সমস্ত রসদের যোগান দিতে জাপানি ইন্ডাস্ট্রি। ফলে জাপানের অর্থনীতিতে সেই সমইয় বড়সর একটা বুস্ট আসে। আর এই বুস্টকে জাপানের সরকার ধরে রেখেছিল। তারা এবার নিজেদের দেশে তৈরি হওয়া প্রোডাক্টের কোয়ালিটি ইমপ্রুভ করতে শুরু করে। আপনারা হয়তো দেখে থাকবেন ছোটবেলায় বা এখনো আমাদের বাবা-মা দাদুরা জাপানি রেডিও জাপানের টেলিভিশন জাপানি জাপানি টর্চ বিভিন্ন ধরনের জাপানি টেকনোলজিকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করে। আরে এর প্রধান কারণ হলো জাপান কন্টিনিউয়াসলি তাদের প্রোডাক্টের কোয়ালিটি বজায় রাখে।
১৯৫০ সাল থেকে জাপানের স্টিল শিপ বিল্ডিং ক্যামেরা, টেলিভিশন, রেডিও, মোটরসাইকেল বিভিন্ন ধরনের প্রোডাক্ট বিশ্ব বিখ্যাত হতে শুরু করে। আর জাপানি টেকনোলজি এতটাই বিশ্বাসযোগ্য হয় ১৯৫৩ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত জাপানের জিডিপি গ্রোথ প্রতিবছর ৯ পার্সেন্ট এর উপরে ছিল। এমনকি এই সময় জাপানে বেকারত্বের হারছিল ৩ পার্সেন্ট। পাসপোর্ট তো বৃদ্বির হার ছিল ৩ পার্সেন্ট। তবে এই সমইয় জাপানের তবে এই সময় জাপানের এক্সপোর্ট তো বৃদ্ধি পাচ্ছিল কিন্তু জাপানের ডোমেস্টিক মার্কেটিং স্পেন্ড করছিল না। কারণ লোকজনের কাছে খরচ করার মতো টাকা ছিল না। তখন ১৯৬০ সালে জাপানের তৎকালীন সরকার ইনকাম ডাবল নামের একটি স্টিম নিয়ে আসে। যাতে জাপানিদের বার্ষিক আয় দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা করা হয়। আরে স্কিন খুব সাকসেসফুল ছিল। ফলে জাপানের ডোমেস্টিক মার্কেট স্পেন্ড করতে শুরু করে। জাপান এমন একটা দেশ যেখানে খুব বেশি পরিমাণে কৃষি জমি নেই। ফলে বেকারত্বের সমস্যা দূর করার জন্য সে সময় ইন্ডাস্ট্রি ছিল প্রধান ভরসা। আর ১৯৬৫ সাল আস্তে আস্তে জাপানে ৪১ শতাংশ কর্মসংস্থান আসছিল ইন্ডাস্ট্রি থেকে। আর মাত্র ২১ শতাংশ কর্মসংস্থান হয়েছিল চাষাবাদ থেকে। এসময় লক্ষ লক্ষ সৈনিক যারা যুদ্ধে গিয়েছিল তারা বিভিন্ন কলকারখানায় কাজে যুক্ত হয়।
জাপানের অর্থনীতি /Japanese economic miracle
১৯৫০ সালে জাপানের ইকোনমি ছিল ১৩ বিলিয়ন ডলারে। আর ১৯৭০ সালে মাত্র কুড়ি বছরের মধ্যে আশ্চর্যজনক ভাবে জাপানের ইকোনমি হয়ে যায় ২১৩ বিলিয়ন ডলার। যা জাপানকে বানায় সেই সময় বিশ্বের চতুর্থ ধনী দেশ। আর ১৯৭০ থেকে ১৯৯৫ সালের মধ্যে আগামী ২৫ বছরে জাপানের ইকোনমি হয়ে যায় ৫.৫ ট্রিলিয়ন ডলারের। যা সেই সময় আমিরিকার পরে বিশ্বের দ্বিতীয় নাম্বারে ছিল। এই কারনে জাপানের এই চেঞ্জকে ইকনোমিক মিরাক্কেল বলা হয়।
তবে শুধু কি আমেরিকার সাহায্য জাপানকে এত উন্নত করেছিল। জাপানের নাগরিকরা শুরু থেকে ডিসিপ্লিন ছিল। তাদের পরিশ্রম এবং আত্মবিশ্বাসী জাপান কেউ উন্নত করেছিল। কিন্তু আমেরিকা সেই সময় যেভাবে প্যাসিফিক রিজনে কমিউনিজম আটকানোর জন্য জাপানকে সাহায্য করেছিল। তার ঠিক উল্টোটা তারা করেছিল ভিয়েতনাম যুদ্ধে। ভিয়েতনাম যুদ্ধের সেই ভয়াবহ ইতিহাস জানার জন্য কমেন্ট করুন আর জাপানের এই জিরো থেকে হিরো হয়ে যাওয়ার ইতিহাস আপনাদের কেমন লাগলো সেটা আমাদের কমেন্ট করে জানান। Eye News এর আজকের জাপান সম্পর্কে অজানা তথ্য এবং ইতিহাসের ঐতিহাসিক রোমাঞ্চকর তথ্য সেয়ার করে আপনার বন্ধুদেরও জানার সুযোগ করে দিন। ধন্যবাদ
লেখক : মোঃ রওশান উজ্জামান রনি
আইনিউজ/ইউএ
- সিলেট ট্রেনের সময়সূচি ২০২৩ দেখুন
- ঢাকা টু সিরাজগঞ্জ ট্রেনের সময়সূচী এবং ভাড়ার তালিকা
- চট্টগ্রাম টু ঢাকা ট্রেনের সময়সূচী এবং ভাড়ার তালিকা
- শীতকালে সিলেটের দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ
- ঢাকা টু পাবনা ট্রেনের তালিকা এবং সময়সূচী
- এবার মাল্টার ভিসা পাওয়া যাবে ঢাকা থেকেই!
- ‘লাসুবন’- শ্রীমঙ্গলে প্রাচীন গিরিখাতের সন্ধান!
- টাঙ্গাইল টু ঢাকা ট্রেনের সময়সূচী এবং ভাড়া তালিকা
- ঢাকা টু দিনাজপুর ট্রেনের সময়সূচী এবং ভাড়ার তালিকা ২০২৩
- ঘুরে আসুন ঝর্ণার স্বর্গ মিরসরাই সীতাকুণ্ডে