মো. রওশান উজ্জামান রনি
আপডেট: ১৮:৪০, ১৯ আগস্ট ২০২৩
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সেরা ১০টি দর্শনীয় স্থান
সেরা ১০ টি দর্শনীয় স্থান। ছবি লিখক
বাংলাদেশের অসংখ্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সেরা ১০ টি দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে আই নিউজের আজকের প্রতিবেদনে আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। আপনিও ঘুরে আসতে পারেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর মন মুগ্ধকর ঐসব জায়গাগুলো থেকে।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বলা হয় বাংলাদেশকে। এই দেশে রয়েছে অসংখ্য দর্শনীয় স্থান। আপনি বাংলাদেশি হয়ে থাকলে অবশ্যই এই দশটি ভ্রমণ স্থানে যেতেই হবে। যদি আপনি বাংলাদেশের এই দশটি ভ্রমণ স্থানে না গিয়ে থাকেন তাহলে আপনি বাংলাদেশের রূপ বৈচিত্রের কিছুই দেখেননি। আমাদের তালিকায় বাংলাদেশের সব থেকে সেরা ১০ টি দর্শনীয় স্থান বা সুন্দর জায়গা কোনগুলি চলুন জেনে নেওয়া যাক।
১০ম অবস্থানে রয়েছে কুয়াকাটা ; বাংলাদেশের সেরা ১০ টি দর্শনীয় স্থানের মধ্যে ১০ নম্বরে থাকবে কুয়াকাটা।
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত। এই সৈকত "সাগর কন্যা" নামে পরিচিত। ছবি লিখক
কুয়াকাটা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম নৈসর্গিক সমুদ্র সৈকত। বাংলাদেশের পর্যটন কেন্দ্রের মধ্যে এটি অন্যতম। এই কুয়াকাটা রয়েছে বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালী জেলাতে। পর্যটকদের কাছে কুয়াকাটা সাগরকন্যা হিসেবে পরিচিত। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের দৈর্ঘ্য হচ্ছে ১৮ কিলোমিটার। প্রতি বছর শীতকালে বিভিন্ন অতিথি পাখি দেখা যায় কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে। সৈকতের পূর্ব দিকে রয়েছে গঙ্গামতি বন। এই সমুদ্র সৈকতটি দেখতে এতটাই সুন্দর যে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষ এই কুয়াকাটা দেখতে ছুটে আসে। কুয়াকাটা বাংলাদেশের একমাত্র সমুদ্র সৈকত যেখান থেকে একসাথে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দেখা যায়।
৯ম অবস্থানে রয়েছে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক ;
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক গাজীপুর | ছবি লিখক
বাংলাদেশের সেরা ১০ টি দর্শনীয় স্থানের মধ্যে ৯ নম্বরে থাকবে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক। বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক বাংলাদেশের গাজীপুর জেলাতে অবস্থিত। বাংলাদেশের সব থেকে বড় এবং সুন্দর পার্ক হচ্ছে এটি। এই বিশাল পার্কটি ৪৯০৯ একর ভূমি জুড়ে রয়েছে। এই পার্কে বিভিন্ন প্রজাতির পশু পাখির রয়েছে। যারা পশু পাখি দেখতে পছন্দ করেন তাদের দর্শনীয় স্থানের সবার উপরে থাকবে এই জায়গাটি। বিভিন্ন প্রজাতির পশুপাখি এই পার্কে নিরাপদ ভাবে বসবাস করে থাকে। বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক তৈরি করা হয়েছে থাইল্যান্ডের সাফারি পার্ক অনুসরণ করে। এই সাফারি পার্ক জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছিল ২০১৩ সালে। এই পার্কে বাঘ সিংহ জিরাফ কে আপনি খোলামেলা ঘুরে বেড়াতে দেখতে পাবেন। এইসব হিংস্র প্রাণীদেরকে বাসে বসে আপনি খুব সহজে দেখতে পাবেন। আপনি যখন এই সাফারি পার্ক সফর করবেন তখন আপনার মনেই হবে না যে আপনি কোন পার্ক সফর করছেন। আপনার মনে হবে আপনি কোন প্রাকৃতিক জঙ্গলে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সাফারি পার্কে আছে জলহস্তী, বাঘ, সিংহ, হাতি, সম্বর হরিণ, মায়া হরিণ, চিত্রা হরিণ, ক্যাংগারু, জেব্রা, বানর, হনুমান, ভাল্লুক, গয়াল, কুমির, গিরগিটি বিভিন্ন প্রজাতির সাপ ও বিচিত্র সব পাখি।
৮ম অবস্থানে রয়েছে টাঙ্গুয়ার হাওর ;
টাঙ্গুয়ার হাওর সুনামগঞ্জ | ছবি লিখক
বাংলাদেশের সেরা ১০ টি দর্শনীয় স্থানের মধ্যে অষ্টম অবস্থানে থাকবে টাঙ্গুয়ার হাওর এই হাওরটি সুনামগঞ্জ জেলাতে অবস্থিত। মেঘালয় পাহাড়ের পাশে অবস্থিত এই হাওর। মেঘালয় পাহাড় থেকে ত্রিশটি ঝরনা এসে মিশেছে এই হাওরে। তবে এই হাওরটি কোন একটি হাওর নয়। ৫১ টি হাওরের সমন্বয়ে এই হাওরটি তৈরি হয়েছে। মজার ব্যাপারটি হচ্ছে এই হাওরটির দৈর্ঘ ৯৭২৭ হেক্টর। আপনি যদি খোলামেলা পরিবেশ পছন্দ করেন তাহলে এই টাঙ্গুয়ার হাওরে আপনাকে অবশ্যই যেতে হবে।
৭ম অবস্থানে রয়েছে নিঝুম দ্বিপ ; বাংলাদেশের সেরা ১০ টি দর্শনীয় স্থানের মধ্যে সপ্তম অবস্থানে থাকবে নিঝুম দ্বীপ।
হাতিয়া নিঝুম দ্বীপ | ছবি লিখক
নিঝুম দ্বীপকে বলা হয় বাংলাদেশের সব থেকে ছোট এবং সুন্দর দ্বিপ। বাংলাদেশের নোয়াখালী জেলাতে এই নিঝুম দ্বীপটি অবস্থিত। 2001 সালে বাংলাদেশ সরকার এই নিঝুম দ্বীপকে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করে। এই নিঝুম দ্বীপের দৃশ্য অনেক সুন্দর। তাছাড়া এখানকার পরিবেশ অনেক শান্ত। তবে এই নিঝুম দ্বীপের আগের নাম ছিল চড় ওসমান। পরবর্তীতে এর নাম পরিবর্তন করে নিঝুম দ্বীপ রাখা হয়েছে। এই ছোট্ট নিঝুম দ্বীপের ক্ষেত্রফল হচ্ছে ১৬৩.৪৫ বর্গ কিলোমিটার। মজার ব্যাপারটি হচ্ছে এই নিঝুম দ্বীপে মোটামুটি ২৫ হাজার মানুষ বসবাস করে থাকে।
৬ষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে নাফাখুম ; বাংলাদেশের সেরা ১০ টি দর্শনীয় স্থান এর মধ্যে ৬ষ্ঠ অবস্থানে থাকবে নাফাখুম।
নাফাখুম ঝর্ণা | ছবি লিখক
এই সুন্দর জলপ্রপাত টি বান্দরবান জেলাতে অবস্থিত। বান্দরবানের অন্যতম জলপ্রপাত নাফাখুম। এই নাফাখুম শব্দের অর্থ হচ্ছে মাছের জলপ্রপাত। এটা একটি প্রাকৃতিক জলপ্রপাত। যেটি দেখতে প্রতিবছর অনেক মানুষ ভিড় করে। এই জলপ্রপাতকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সব থেকে বড় জলপ্রপাত বলা হয়। এছাড়াও নদীর দুপাশে সবুজে মোড়ানো উচু উচু পাহাড় রয়েছে। কোন কোন পাহাড়ের চূড়া ঢেকে থাকে মেঘের আস্তরে। নাফাখুম জলপ্রপাতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সম্পূর্ণরুপে উপভোগ করতে হলে আপনাকে এখানে আসতে হবে শীত এবং বর্ষার মাঝামাঝি সময়ে।
৫ম অবস্থানে রয়েছে রাতারগুল ; বাংলাদেশের সেরা ১০ টি দর্শনীয় স্থানের মধ্যে পঞ্চম অবস্থানে থাকবে রাতারগুল।
সিলেট রাতারগুল জলাবন । ছবি লিখক
এটি বাংলাদেশের একমাত্র মিঠা পানির জলপ্রবন। এই দর্শনীয় স্থানটি সিলেটের গোয়ান ঘাটে অবস্থিত। পুরো পৃথিবীতে মিঠাপানির জলভূমি রয়েছে ২২টি। এর মধ্যে দক্ষিণ এশিয়াতে রয়েছে দুইটি। একটি রয়েছে শ্রীলঙ্কাতে আর একটি রয়েছে বাংলাদেশে। এই বনের আয়তন প্রায় তিন হাজার ৩২৫ দশমিক ৬১ একর। এই মিঠা পানির জলভূমি দেখতে অনেক সুন্দর। বর্ষাকালে এর প্রকৃত সৌন্দর্য অবলোকন করা যায়। নৌকাতে করে যখন আপনি এটি ঘুরবেন তখন অন্যরকম মজা অনুভব করতে পারবেন। সুন্দর এই জলভূমির তুলনা দেওয়া হয়ে থাকে আমাজন রেইন ফরেস্টের সাথে। এখানকার গাছগুলো চার থেকে সাত মাস পানির নিচে তলিয়ে থাকে।
৪র্থ অবস্থানে রয়েছে সাজেক ভ্যালি ; বাংলাদেশের সেরা ১০ টি দর্শনীয় স্থানের মধ্যে চতুর্থ অবস্থানে থাকবে সাজেক।
রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলা অবস্থিত সাজেক ভ্যালি। ছবি লিখক
সাজেক ভ্যালি বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় এবং নৈসর্গিক সুন্দর একটি জায়গা। এই সাজেক ভ্যালি রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলা অবস্থিত এবং এই সাজেক ভ্যালির ক্ষেত্রফল হচ্ছে ৭০২ বর্গমাইল। সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে এই ভ্যালির উচ্চতা ১৮০০ ফুট। সাজেকের চুড়াতে যখন আপনি উঠবেন তখন পাহাড়ের একটি অপরূপ দৃশ্য দেখতে পাবেন। এখানে বাঁশের ভেতর রান্না করা বিভিন্ন রকম খাবার পেয়ে যাবেন। এ খাবারের রয়েছে অন্য রকম স্বাদ। তাই সাজেক গেলে আপনিও এই খাবারের স্বাদ নিতে ভুল করেন না।
৩য় অবস্থানে রয়েছে সুন্দরবন ; বাংলাদেশের সেরা ১০ টি দর্শনীয় স্থানের মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে থাকবে সুন্দরবন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং জীববৈচিত্র্যের লীলাভূমি বলা হয় সুন্দরবনকে। এটি বঙ্গোপসাগরে পাশে অবস্থিত একটি বিশাল বনভূমি। এই সুন্দরবন বিশাল বড় এলাকা জুড়ে রয়েছে। এই সুন্দরবন কভার করেছে খুলনার সাতক্ষীরা, বাঘেরহাট, পটুয়াখালী এবং বরগুনা জেলাকে। তাছাড়া ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দুটি রাজ্যের ভেতর দিয়ে গেছে এই সুন্দরবন। একটি হচ্ছে উত্তর ২৪ পরগনা আর একটি হচ্ছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা।
পৃথিবীর সবথেকে বড় ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন
পৃথিবীর সবথেকে বড় ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট বলা হয় এ সুন্দরবনকে। তাছাড়া এই সুন্দর বনে বিপুল প্রজাতির পশু পাখি রয়েছে। এই সুন্দরবনের দৈর্ঘ্য হচ্ছে ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটার। বাংলাদেশের এই সুন্দরবন ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজের পুরস্কার পেয়েছে। সুন্দরবনের ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে ৬ হাজার ১৭ বর্গ কিলোমিটার রয়েছে বাংলাদেশের মধ্যে এবং বাকি অংশ রয়েছে ভারতের মধ্যে।
২য় অবস্থানে রয়েছে কক্সবাজার ; বাংলাদেশের সেরা ১০ টি দর্শনীয় স্থানের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে কক্সবাজার। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সানিত রূপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এই কক্সবাজার। পৃথিবীর সবথেকে দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত বলা হয় এই কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতকে।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতকে। ছবি লিখক
প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ দর্শনার্থী ভির করে এই কক্সবাজারে। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের দৈর্ঘ্য হচ্ছে ১২০ কিলোমিটার। এখানে রয়েছে সারিসারি ঝাউবন ও বালির নরম বিছানা। এছাড়াও সামনে রয়েছে নীল পানির বিশাল সমুদ্র। কক্সবাজারে দর্শনীয় স্থানের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত, কলাতলী বিচ, লাবনী বিচ, হিমছড়ি, ইনানি বিচ, সোনাদিয়া, রামু, মহেশখালী, আদিনাথ মন্দির, ডুলাহাজারা, টেকনাফ, সেন্ট মার্টিনস দ্বীপ।
১ম অবস্থানে রয়েছে সেন্ট মার্টিন ; বাংলাদেশের সব থেকে সেরা দর্শনীয় স্থান হচ্ছে সেন্টমার্টিন। বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ হচ্ছে সেন্টমার্টিন। সেন্টমার্টিন এর চারপাশে সাগর রয়েছে এবং ওপরে রয়েছে নীল আকাশ যার দৃশ্যই অসাধারণ। বাংলাদেশের মানচিত্রের সবথেকে দক্ষিণে অবস্থিত এই সেন্টমার্টিন।
সেন্টমার্টিন দ্বীপ ড্রোন ফুটেজ । ছবি লিখক
কক্সবাজার জেলা থেকে এটি ১২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। সেন্টমার্টিন দ্বীপ হচ্ছে ১৭বর্গ কিলোমিটারের একটি ক্ষুদ্রদীপ। স্থানীয় ভাষায় এ সেন্ট মার্টিনকে নারিকেল জিনজিরা বলা হয়ে থাকে। নারিকেল গাছ গুলো দেখলে আপনার চোখ জুড়িয়ে যাবে। নিজের চোখে না দেখলে আপনি বিশ্বাসই করতে চাইবেন না।
যারা ভ্রমণ পিপাসূ মানুষ রয়েছেন তারা অবশ্যই বাংলাদেশের এই দশটি স্থানে ভ্রমণ করবেন। আমাদের লিস্টে থাকা এই দশটি ভ্রমণ স্থানের মধ্যে আপনি কোন স্থান ভ্রমণ করেছেন সেটি কমেন্টবক্সে জানাতে ভুলবেন না। এই রকম ইন্টারেস্টিং এবং ইনফরমেটিভ তথ্য পেতে আই নিউজের সাথে থাকুন। ভালো লাগলে আমাদের রোমাঞ্চকর তথ্য গুলো আপনার সোশ্যাল মিডিয়ার সেয়ার করুন।
আইনিউজ/আর
- সিলেট ট্রেনের সময়সূচি ২০২৩ দেখুন
- ঢাকা টু সিরাজগঞ্জ ট্রেনের সময়সূচী এবং ভাড়ার তালিকা
- চট্টগ্রাম টু ঢাকা ট্রেনের সময়সূচী এবং ভাড়ার তালিকা
- শীতকালে সিলেটের দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ
- ঢাকা টু পাবনা ট্রেনের তালিকা এবং সময়সূচী
- ‘লাসুবন’- শ্রীমঙ্গলে প্রাচীন গিরিখাতের সন্ধান!
- এবার মাল্টার ভিসা পাওয়া যাবে ঢাকা থেকেই!
- ঢাকা টু দিনাজপুর ট্রেনের সময়সূচী এবং ভাড়ার তালিকা ২০২৩
- টাঙ্গাইল টু ঢাকা ট্রেনের সময়সূচী এবং ভাড়া তালিকা
- ঘুরে আসুন ঝর্ণার স্বর্গ মিরসরাই সীতাকুণ্ডে