মো. রওশান উজ্জামান রনি
আপডেট: ২৩:১৫, ১৯ আগস্ট ২০২৩
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপূর্ব শ্রীমঙ্গল
শ্রীমঙ্গল চা-কন্যা
রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় ১৭৫ কিলোমিটার উত্তর পূর্বে এলে মৌলভীবাজার জেলার চা জনপদ শ্রীমঙ্গল। চা-কন্যার ভাস্কর্য আর প্রকৃতির অপরূপ সাজ, সবুজ শ্যামলের সমারোহে ভরপুর শ্রীমঙ্গল চায়ের রাজধানীক্ষেত এলাকা।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা ৪৫০.৭ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের নিভৃত অরণ্যভূমি। টিলা টক্কর ও সমতলের মিশ্র ভূমিরূপ। কোথাও উঁচু কোথাও নিচু আর গ্রাম জুড়ে বন বানানির চোখ জুড়ানো সবুজের সমারোহ মুগ্ধ করে তুলে ভ্রমণ পিয়াসীদের প্রাণ।
শ্রীমঙ্গলের চা বাগান ; শ্রীমঙ্গলের ৪৩ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় অর্ধেক অঞ্চলই চা বাগানের দখলে। মাইলকে মাইলজুড়ে চা বাগান আর চা বাগান শ্রীমঙ্গলের শ্রী বাড়িয়েছে চিরসবুজ নকশি কাঁথার কারু কাজে। চা বাগানে আলো ছায়ার স্বপ্ন রাজ্য গড়েছে নানা প্রজাতির শেড ট্রি। এসব ছায়া বৃক্ষ সূর্যালোক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে চা গাছের সর্বোত্তম শারীরবৃত্তীয় কার্যক্রম নিশ্চিত করে। দেশের ১৬৩ টি চা বাগানের মাঝে চল্লিশটি এই শ্রীমঙ্গলে। শ্রীমঙ্গল এজন্যই চায়ের রাজধানী। চল্লিশটি চা বাগান মুড়িয়ে রেখেছে শ্রীমঙ্গলের মোট ১৮৪ বর্গ কিলোমিটার এলাকা। চা বাগান গড়ার কারিগর চা শ্রমিকরা বাগান করেন ক্যামেলিয়া সাইনেনসিস বৈজ্ঞানিক নামের এই চা গাছ দিয়ে। এই চা শ্রমিকরাই চা বাগানের প্রাণ। ওদের শ্রমে ঘামে কর্মকৌশলতায় এই চা বাগানের শ্রী বৃদ্ধি। চা পাতা তুলতে হয় শক্তি ও কৌশলের মুন্সিয়ানা দিয়ে। ছেলেদের চেয়ে এই কাজ মেয়েরা ভালো পারেন। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিশ্ববাজারে রপ্তানি হওয়া শ্রীমঙ্গলের চা বাংলাদেশের অন্যতম অর্থকরী ফসল হিসেবে দেশে আনছে প্রচুর বিদেশী মুদ্রা।
লাউয়াছড়া বন ; সবুজ বনের বুক চিরে এগিয়েছে সরক পথ। শ্রীমঙ্গল উপজেলা সদর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে লাউয়াছড়া নামের এই বোন তার রাজ্যপাট সাজিয়েছে মৌলভীবাজারের দুই উপজেলা কমলগঞ্জ এবং শ্রীমঙ্গলে। ক্রান্তীয় আধা চিরসবুজ ও মিশ্র পর্ণমোচী ঘরানার এই বোন খুব নিবিড়। বোনের মাঝেই রেলপথ। লাওয়াছরা জাতীয় উদ্যানের ভেতরে থাকা এক, দেড় ও তিন ঘন্টার প্রতিটি ট্রেন প্রকৃতিপ্রেমীদের সুযোগ দেয় খুব কাছ থেকে প্রকৃতি উপভোগের। বনের রূপ সভায় যাত্রীদের মন রাংগিয়ে এ পথে প্রতিদিন ছুটে চলে সিলেট ব্রাহ্মণবাড়িয়া চট্টগ্রাম এবং ঢাকা গামী ট্রেন। লাউয়াছড়ায় ট্রেনের বাঁকে বাঁকে নজরকারে জীববৈচিত্রের নানান নমুনা। ১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদে ভরা এই বনে দুষ্প্রাপ্য গাছ আর উঁচু উঁচু গাছ আছে অনেক। দেশি-বিদেশি পর্যটক আর প্রকৃতি প্রেমীদের খুব পছন্দের জায়গা এই বন।
বিপন্ন প্রাণী ; দেশের মোট পাঁচ প্রজাতির বানরের মাঝে এখানে আছে চার প্রজাতির। বিপন্ন প্রাণীর তালিকায় নাম লেখানো লেজ ছাড়া উল্লুক আর লম্বা লেজের মুখ পোড়া হনুমান এ বোনের অমূল্য সম্পদ। প্রায় আড়াইশো প্রজাতির পাখিরও দারুন অভয়াস্রম এই বন। প্রাণীর বিচিত্র সম্ভারে ভরা শ্রীমঙ্গলের এই বন প্রকৃতি সাজিয়েছি আপন ঐশ্বর্যে। বছরে প্রায় ৩৩৩ সেন্টিমিটার বৃষ্টি হওয়ায় বনোবিজ্ঞানের পরিভাষায় লাউয়া ছড়াকে বলা হয় রেইনফরেস্ট। আর্দ্র বনভূমির জলবায়ু পর্যাপ্ত সূর্যালোক আর প্রচুর বৃষ্টিপাতের কারণেই এতটা নিবিড় এই বন। লাউয়াছড়া বনের বিস্তৃতি প্রায় চার হাজার ৭৫০ হেক্টর জুড়ে। ১২৫০ সেক্টর নিয়ে জাতীয় উদ্যান। আর বাকি সাড়ে তিন হাজার হেক্টর জুড়ে রিজার্ভ ফরেস্ট। নানা প্রজাতির বেত আর বাস এই বনের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। ৪১২ প্রজাতির দেশী মাকড়সার অনেকগুলোরই নিবাস এই বনে। মাটি, গাছ, ফুল, পাতা এই বনের সবখানেই বেসুমার পোকামাকড়।
বুনো ফুল ; নানা রঙের নানা আকারের জানা-অজানা বুনো ফুল চোখে পড়ে এই বনের গাছে গাছে। মনোরোভা বুনো ফুলেরও কমতি নেই বনে। বুনো ফুলের টানে রংবাহারি প্রজাপতিও হাজির। বন দেখতে আসা ভ্রমণ পিয়াসীদের কাছে স্নিগ্ধ প্রকৃতির দারুন স্বপ্নলোক মনোমোহিনী এই লাউয়া ছড়া বন।
আনারসের বাগান ; টিলা টক্করের গা জুরে আনারসের চোখ জুরানো সব বাগান। ৪ প্রজাতির আনারস ফলে শ্রীমঙ্গলে। সবচেয়ে বেশি হল হারিকুন প্রজাতির। কাটায় ভরা লম্বাটে পাতার বুলুটির মাঝে আনারস পরিপক্ক হয় মাথায় ঝুঁকি নিয়ে। টিলা টক্করের ঢাল, বেলে দোয়াস মাটি উষ্ণ ও আদ্র জলবায়ু আর চাষীদের সযত্ন পরিচর্যার কারণে আনারসের প্রচুর ফলন এই জনপদে। শ্রীমঙ্গলের প্রতিটি হানিকুইন আনারসের গড় ওজন প্রায় এক কেজির মত। পুষ্টিগুণে ভরা রসালো এই ফল স্বাদেও বেশ মিষ্টি। দেশের সবচেয়ে বেশি আনারস ফলানো উপজেলা গুলোর একটি হওয়ায় শ্রীমঙ্গলকে অনেকে বলেন আনারসের রাজধানী।
কাঁঠাল বাগান ; জাতীয় ফল কাঁঠালেরও বার বারন্ত ক্ষরণের শ্রীমঙ্গলে। পানি দাঁড়ায় না এমন এটেল দোয়াস মাটি আর উষ্ণ ও আর্য জলবায়ুর কারণে প্রচুর কাঁঠাল ফলে এই জনপদের গাছে গাছে । পেশাদার কাঁঠাল চাষীরা গাছের কাঁঠাল সাধারণত অক্ষত অবস্থায় কেটে নামান দড়ি দিয়ে বেঁধে। এখানে কখনো গাছ মালিক নিজেই কখনো বা ব্যাপারি বা পাইকারি লোকজন গাছ মালিকের গাছ বা বাগান থেকে কাঠাল সংগ্রহ করেন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে। গাছের নিচের দিকের কাঁঠাল পারলে দড়ি লাগে না। ফলন বেশি বলে গ্রিসের সময়টায় স্থানীয় কাঁঠাল চাষী শ্রমিক ক্রেতা ও বিক্রেতাদের জীবিকার অন্যতম মাধ্যম হয়ে ওঠে এখানকার কাঁঠাল। শ্রীমঙ্গলে প্রতিবছর কাঁঠাল ফলে প্রায় ৩০০ হেক্টর জমিতে। প্রতি হেক্টরে উৎপাদন বিশ টনের মত। বছরে মোট উৎপাদন প্রায় ৭ হাজার টন। রিক্সার চাকা সম্বলিত ঠেলাগাড়িতে ভরে বেশিরভাগ কাঁঠাল চালান হয় কাছে দূরের নানান হাটবাজারে।
লেবু বাগান ; লেবু গাছের বাগানের পর বাগান আছে শ্রীমঙ্গলের টিলা টপ করে। আকর্ষণীয় লেবু ফুলের পাপড়ি গুলো নিচে লালচে বেগুনি উপরে সাদা। পাতি, কাগজ, এলাচি সহ ৮ থেকে ১০ প্রজাতির লেবু ফল শ্রীমঙ্গলে। গাছে কমবেশি সারা বছরই লেবু ধরে। বাগানের লেবু চাষিরা সবচেয়ে বেশি লেবু সংগ্রহ করে মে থেকে আগস্ট পর্যন্ত। পুরো মৌলভীবাজার জেলায় বছরে লেবুর উৎপাদন প্রায় ২৮ হাজার টন। শ্রীমঙ্গল উপজেলায় একাই যোগান দেয় প্রায় ২১ হাজার টন লেবু। শ্রীমঙ্গলের রাস্তায় ঠেলাগাড়ি ভরে ভরে এভাবে আনারস কাঁঠাল আর লেবু নিয়ে যাওয়া সাত সকালের খুব পরিচিত দৃশ্য। কৃষি পূণ্যবাহী ঠেলাগাড়ির কাফেলার গন্তব্য কাছে ও দূরের হাট বাজার ও মোকাম।
শ্রীমঙ্গল বাজার ; শহরের এই শ্রীমঙ্গল বাজার রিতুভিত্তিক ফলফলাদি বিবরণীর নাম করা জায়গা। ঠেলায় ভর্তি আনারও সেখানে বিক্রি হয় নিলামের মাধ্যমে। বিক্রি হওয়া আনারস ট্রাক ভরে ভরে চালান হয় নানা গন্তব্যে। কাঁঠাল বেপারীদের মাধ্যমে প্রচুর কাঁঠাল আসে এখানকার কাঠাল আরতে। পরোক্ষ করার পর যাত ও আকার ভেদে বেশিরভাগ কাঁঠাল বিক্রি হয় পাইকারি দরে। শ্রীমঙ্গলের বেশিরভাগ কাঁঠাল পাইকারদের মাধ্যমে চালানো হয় মৌলভীবাজার, সিলেট, হবিগঞ্জ, বগুড়া, ঢাকা, নরসিংদী সহ দেশের নানা জেলা জনপদের হাটবাজারে। চায়ের পর লেবু শ্রীমঙ্গলের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ কৃষি পণ্য। লেবু নিলামের কায়দাটা এখানে আলাদা। নিলামের দর ক্রেতারা বলেন বিক্রেতার কানে। বিক্রেতার কানাকানির মধ্য দিয়ে দর বারে লেবুর। আরদ দারির মধ্যস্থতায় বিক্রি হওয়া শ্রীমঙ্গলের লেবু পাইকারদের মাধ্যমে চালানো হয় বাংলাদেশের প্রায় সবগুলো অঞ্চলে। একাংশ রপ্তানি হয় বিদেশেও।
সড়ক পথ এবং রেলপথ ; শ্রীমঙ্গল উপজেলার সকল কাজের প্রাণকেন্দ্র শ্রীমঙ্গল শহর। মৌলভীবাজার জেলা সদর থেকে এটি প্রায় ২০ কিলোমিটার দক্ষিণে। থানা জনপদ হিসেবে শ্রীমঙ্গলের বিকাশ সেই ১৯১২ সাল। থানা থেকে একটি উপজেলা হয়েছে বিগত ৯০ দশকে। প্রায় সোয়া ১৬বর্গ কিলোমিটার এলাকায় নয়টি ওয়ার্ড আর ২০টি মহল্লায় বিন্যস্ত এই শ্রীমঙ্গল শহর দেশের বাদ বাকি অংশের সাথে যুক্ত সড়ক পথ এবং রেলপথের মাধ্যমে। ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ২৩১ কিলোমিটার দূরের এই শ্রীমঙ্গল রেলস্টেশন ছুয়ে পারাবাত, জয়ন্তিকা, উপবন, পাহাড়িকা ও উদয়ন নামের ৬টি আন্তন্নগড় এবং একাধিক মেল ট্রেনের নিয়মিত চলাচল না না গন্তব্যে। ১১১ বছর আগে এই স্টেশন নির্মাণের পর ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ প্রথম প্রথম চা সহ বিভিন্ন বাণিজ্য পণ্য আনাহিয়া করেছে শুধু। ট্রেন যাত্রী বেরেছে পরে। এখন শ্রীমঙ্গলের অন্যতম প্রবেশদ্বার এই রেলওয়ে স্টেশন।
রাবার বাগান ; শ্রীমঙ্গল শহরের প্রায় সাড়ে ১৬ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে সাতগাঁও রাবার বাগান। বাংলাদেশের ১৭ টি রাবার বাগানের একটি সাতগাঁওয়ের এই বাগান। শ্রীমঙ্গলে এই রাবার বাগান গড়ে উঠেছে ১৭৪৪ জায়গার উপর। লম্বা গড়নের রাবার গাছ মধ্যম আকৃতির। এর বৈজ্ঞানিক নাম হিভিয়া ব্রাজিলিয়ানসিস। রাবার গাছের পাতা বেশ পুরো এর রং গাঢ় সবুজ। প্রতি হেক্টরে সাধারণত আড়াইশো রাবার গাছ লাগানো যায়। প্রাপ্তবয়স্ক রাবার গেছে কান্ডের বাকল কোনাকুনিভাবে খেজুর গাছের মতো চেছে কাঠিও পাত্র জুড়ে দিলে বাকল ছড়িয়ে বের হওয়া ঘন রস ফোটায় ফোটায় জমতে থাকে। প্রতিটি রাবার কাছ থেকে প্রতিবছর তোরক্ষীর বা দুধকস পাওয়া যায় প্রায় দুই কেজির মতো। প্রতিদিন প্রায় ৩০ থেকে ৪০ কেজি দুধ কষ সংগ্রহ করা হয় শ্রীমঙ্গলের এই রাবার বাগানে। রাবার বাগানের এই দুধকষ ফ্যাক্টরিতে নিয়ে প্রাকৃতিক রাবার তৈরি করা হয়।
পুঞ্জি বা গ্রাম ; টিলাটক্করের গায়ে ভাঁজে বানানো নিজস্ব ঘর এমন পুঞ্জিভূত বসতিকে খাসিরা বলেন পুঞ্জি। পুঞ্জি মানে গ্রাম। খাসিরা মনে করেন নারী থেকে মানবগোষ্ঠীর উৎপত্তি। খাসিদের সমাজ কাঠামোটাই মাতৃপ্রধান। মেয়েদের প্রাধান্য প্রায় সবক্ষেত্রে। শুধু কর্তৃতে নয় কাজী-কর্মেও বেশ অগ্রণী ওরা। আয়ের অন্যতম উৎস হওয়ায় তুমপেয় নামের গাছ পান ধোঁয়া বাছাই আর গুনে গুনে বিড়া বানানোর এই কাজ চলে খাসিয়াদের বাড়িতে বাড়িতে। ১২টা করে ১৪৪ টা পান একখানে করলে ১ বিরা। খাসিরা বলেন এক মুঠা। ঝাল স্বাদের দূষণমুক্তই পানির বেশ কদর দেশে-বিদেশে। খাসিরা পরিচ্ছন্নতা যে ভালবাসেন সেটা ওদের ঘর গেরস্থালি দেখলেই বোঝা যায়। মাতৃপ্রধান ঘাসের সমাজে মেয়েদের প্রাধান্যটা এমনি এমনি আসেনি এটা হল অর্জন করেছেন পরিশ্রমের গুণে। বাইরের কাজ ঘরের কাজ সব কাজ ওরা সমান তালে করেন। কর্মীষ্ঠ এই খাসিরা টিপড়া, মণিপুরী ও গারো ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বাসিন্দাদের সাথে নিয়ে এই শ্রীমঙ্গলে এনেছি জীবন ধারার বৈচিত্র।
কৃষি ও শিল্প ; চোখ জুড়ানো ফসলের প্রান্তর নজর কারে শ্রীমঙ্গলের হাওড় অঞ্চলে। ক্ষেতের ধার ঘেঁষে নিশসর্গ ধৈন্য বাঙালি গ্রাম গুলো দেখার মত। শ্রীমঙ্গলে আবাদযোগ্য জমি ২৩ হাজার ফ্যাক্টরির বেশি। প্রায় ৩৩% মানুষ এখানে যুক্ত কৃষিকাজের সাথে। মূল ফসল ধানের মত শাকসবজির ফলনও কম নয় জনপদে। শ্রীমঙ্গলের ৯টি ইউনিয়নের ১১০ টি মৌজায় আছে মোট ২০৫টি কৃষি প্রধান গ্রাম। এখানকার প্রতিটি গ্রামেই গ্রামীন জীবন ধারার চীর চেনা ছবি। শ্রীমঙ্গলের মোট জনসংখ্যা সাড়ে তিন লাখের মতো বেশিরভাগ বাসিন্দার ঠাঁই গ্রামে। সুই সুতার সেলাই করা নকশী কাথা গড়া শ্রীমঙ্গলের গ্রামীন মেয়েদের বংশ পরম্পরা ঐতিহ্য। বাঙালি ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী মিলিয়ে শ্রীমঙ্গলের অধিকাংশ শিশু এখন শামিল লেখাপড়ার আয়োজনে। গ্রামের নারিকেল গাছে পাখিদের বাসায় না থাকলেই নয়। ঝুলন্ত এইসব বাসা বাবুই পাখিদের। বাবুই পাখিদের খড়কুটো দিয়ে বানানো বাসা, বাসা হিসেবে আসলেই খাসা।
হাইল হাওর ; শ্রীমঙ্গল শহর থেকে মাত্র মাইল দু এক উত্তরে নামকরা হাইল হাওর। হাইল হাওরের অর্ধেকটা রাজ্যপাত মৌলভীবাজারের সদর উপজেলায় বাকি অর্ধেকটা শ্রীমঙ্গল উপজেলায়। হাওরের যেখানটায় গভীরতা কম সেখানেই পদ্মসহ নানা জলজলতা গুল্ম উদ্ভিদের উপনিবেশ। জনবিরল হাওরে জেলেরাই হাওরের প্রতিদিনের বান্ধব। হাওরের নারী নক্ষত্র চেনেন ওরা। জানেন মাছের আনাগোনা কোথায় সবচেয়ে বেশি আর কখন কিভাবে ধরতে হবে সেই মাছ। হাই হাওরের জল কাদা স্থানীয় মহিষগুলিরও পছন্দের চারণ ভূমি। খাবারের অভাব নেই বলে হাইল হাওর শত শত খামারি হাঁসের দারুণ মিগয়া ক্ষেত্র। খামারি হাসির পাশাপাশি নানা জাতের দেশীয় পরিযায়ী পাখপাখালির অভয়াশ্রম এই হাওর। পদ্মসহ নানা জলজলতা গুল্ম উদ্ভিদের চমৎকার রাজ্যপাত থাকায় হাইল হাওর শুধু জেলে নয় প্রকৃতিপ্রেমীদেরও খুব পছন্দের হাওর। সাধারণত নিম্ন জলাভূমির আয়তন ২০ একরের বেশি হলেই হাওর বলে তাকে। এই হাইল হাওরের আয়তন আগের চৌদ্দ হাজার হেক্টর থেকে কমে এখন দাঁড়িয়েছে ৭হাজার হেক্টরে। শ্রীমঙ্গলের স্থলে জলে অন্তরীক্ষে সম্পদ এবং সৌন্দর্যের এতোটুকু কমতি নেই কোথাও। সম্পদের ঐশ্বর্য আর রবির মাধুর্য অনন্য এই শ্রীমঙ্গল তার রকমারি বৈভব অবিরাম বিলায় বৈচিত্রের ধারা জলে।
আই নিউজ/আর
- সিলেট ট্রেনের সময়সূচি ২০২৩ দেখুন
- ঢাকা টু সিরাজগঞ্জ ট্রেনের সময়সূচী এবং ভাড়ার তালিকা
- চট্টগ্রাম টু ঢাকা ট্রেনের সময়সূচী এবং ভাড়ার তালিকা
- শীতকালে সিলেটের দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ
- ঢাকা টু পাবনা ট্রেনের তালিকা এবং সময়সূচী
- ‘লাসুবন’- শ্রীমঙ্গলে প্রাচীন গিরিখাতের সন্ধান!
- এবার মাল্টার ভিসা পাওয়া যাবে ঢাকা থেকেই!
- ঢাকা টু দিনাজপুর ট্রেনের সময়সূচী এবং ভাড়ার তালিকা ২০২৩
- টাঙ্গাইল টু ঢাকা ট্রেনের সময়সূচী এবং ভাড়া তালিকা
- ঘুরে আসুন ঝর্ণার স্বর্গ মিরসরাই সীতাকুণ্ডে