আই নিউজ প্রতিবেদক
খাসিয়া জনগোষ্ঠীর জানা অজানা নানা কথা
একটি খাসিয়া পুঞ্জিতে তৈরি খাসিয়াদের মাচা ঘর।
পাহাড়ের ঢালে ঢালে তাদের বসবাস। জীবিকার প্রধান উৎস পান চাষ। রয়েছে নিজস্ব সংস্কৃতি, খাদ্যাভাস, পোশাক-আশাক, জীবনযাপেনর রীতিনীতি; একটি মাতৃতান্ত্রিক ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী খাসি বা খাসিয়া। স্বাতন্ত্র জীবনধারা আর বর্ণাঢ্য ঐতিহ্যের অধিকারী খাসিয়া জনগোষ্ঠী। প্রচলিত আছে পাহাড়ের উঁচুতে বাস করে বলে খাসিয়া জনগোষ্ঠীর লোকজন নিজেদের উঁচু জাতি হিসেবে গর্ববোধ করে। এই নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী নিজেদেরকে মনে করেন প্রকৃতির সন্তান হিসেবে।
সিলেটের খাসিয়ারা সিনতেং গোত্রভুক্ত জাতি। এ জনগোষ্ঠীর লোকজন নিজেদের গ্রামকে পুঞ্জি বলে ডাকেন। পুঞ্জি প্রধান হলেন মান্ত্রী। বাঙালীর মতো তাদেরও প্রধান খাদ্য ভাত ও মাছ। তাছাড়া খাসিয়া সমাজে কাঁচা সুপারি ও পান খাওয়ার প্রচলনও খুব বেশি। খাসিয়াদের উৎপাদিত পান বাংলাদেশে খুবই লোকপ্রিয়।
সাধারণত মেয়েরা বিয়ের পর স্বামীর বাড়ি থাকলেও খাসিয়া জনগোষ্ঠীর রীতি অনুযায়ী বিয়ের পর ছেলেদেরকে থাকতে বউর বাড়ি। মা-বাবা ভাইবোন সবাইকে ছেড়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে হয় স্ত্রীর বাড়িতেই। খাসিয়া সমাজ ব্যবস্থায় কোনও পুরুষ সম্পত্তির মালিক হয় না। এরা মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় পরিচালিত। খাসি জনগোষ্ঠীর বিশ্বাস, নারীর হাত ধরেই মানব সভ্যতার সূচনা। তাই খাসিয়া সমাজে সূচনালগ্ন থেকেই মাতৃতন্ত্রই প্রাধান্য পেয়েছে বেশি, হয়েছে প্রতিষ্ঠিত। প্রাপ্তবয়স্ক নারীপুরুষ বিয়ের পিড়িতে বসা খাসিয়া সমাজে মহাপূণ্যের কাজ। তাদের ধারণা এটি সৃষ্টিকর্তার নির্দেশ এবং বিয়ে না করা মহাপাপ, অন্যথায় অভিশপ্ত হতে হয়।
জীবিকার তাগিদে দলবলসহ স্থান ত্যাগ করে খাসিরা নতুন পুঞ্জি গঠন করে। খাসিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন সবসময় নিরুপদ্রবে থাকতে ভালোবাসে। প্রত্যেকটি খাসিয়া পুঞ্জিতে রয়েছে নিজস্ব নিয়ম-কানুন। পুঞ্জি প্রধানগণ নিজেদের আচারবিচার সম্পন্ন করে থাকেন।
খাসিয়াদের সাংস্কৃতিক ইতিহাস বেশ সমৃদ্ধ। বিয়েসহ তাদের নানা অনুষ্ঠান বেশ সরগরম ও উপভোগ্য রকমের হয়ে থাকে। বিয়ে ছাড়াও নানারকম উৎসবে ওরা দলবদ্ধভাবে নৃত্যগীত করে। জন্ম-মৃত্যুর অনুষ্ঠানাদিও এভাবেই পালন করে। খাসি বা খাসিয়াদের নাচ-গান অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন।
বাংলাদেশের মৌলভীবাজার জেলাসহ সিলেট বিভাগে এবং ভারতের আসামে ও মেঘালয় রাজ্য জুড়ে খাসি জনগোষ্ঠীর লোকজনের বসবাস। জানা যায়, প্রায় পাঁচশ বছরেরও বেশি আগে খাসিয়ারা ভারতের আসাম থেকে বাংলাদেশে আসে।
বাংলাদেশে খাসিয়াদের আদি বসতি বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব সীমান্তে অবস্থিত সুনামগঞ্জ জেলায়, ভারতের মেঘালয় রাজ্যের খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে যা সমতল ভূমি বা হাওরাঞ্চল থেকে ৯/১০ মিটার উচুঁতে অবস্থিত। অতীতে এ অঞ্চলের কয়েকটি পরগনায় কোনও এক খাসিয়া সর্দার একটি রাজ্যও স্থাপন করেছিলেন বলে শোনা যায়। মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জ, বড়লেখা, জুড়ী, রাজনগর ও সদর উপজেলাজুড়ে তাদের বিস্তৃতি। চা বাগানে বহু খাসিয়া চাকুরি করে। বাংলাদেশে খাসিয়া জনসংখ্যার ঠিক হিসাব এখনও জানা যায়নি ‘বাংলাদেশ খাসিয়া সমিতি’তাদের সংখ্যা ৩০ হাজার বলে দাবি করে। যদিও তা সঠিক কি না তা নিয়ে রয়েছে মতভেদ।
খাসি জনগোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষা থাকলেও নেই কোনো সুনির্দিষ্ট লিখিত রূপ। ফলে, মুখের কথা এবং চিরায়ত জীবানাচারেই সীমাবদ্ধ খাসিয়া ভাষার ব্যবহার। এক সময়ে খাসি ভাষা বাংলা অক্ষরে লেখা হতো। বাইবেলের কিছু অংশ প্রথম খাসি ভাষায় অনুবাদ করে পরে বাংলা অক্ষরে লেখা হয়েছিল বলে শোনা যায়। শিক্ষিত খাসিয়ারা আজও বাংলা অক্ষরে খাসিয়া ভাষায় চিঠিসহ অন্যান্য ধর্মীয় প্রয়োজনীয় তথ্যাদি কাগজে লিখে রাখে। বাংলাদেশে খাসিয়া ভাষার কোনও সর্বজনীন রূপ নেই।
আই নিউজ/এইচএ
- কেএফসির মালিকের জীবন কাহিনী
- প্রজাপতি: আশ্চর্য এই প্রাণীর সবার ভাগ্যে মিলন জোটে না!
- মা-শাশুড়িকে হারিয়েও করোনার যুদ্ধে পিছিয়ে যাননি এই চিকিৎসক
- বিশ্বের অদ্ভুত কিছু গাছের ছবি
- সোনার দাম এত কেন : কোন দেশের সোনা ভালো?
- যেখানে এক কাপ চা পুরো একটি পত্রিকার সমান!
- তিন রঙের পদ্মফুলের দেখা মিলবে এই বিলে
- রহস্যময় গ্রামটি লাখো পাখির সুইসাইড স্পট
- ২০২৩ সালে পৃথিবীর শক্তিশালী ১০টি দেশ!
- বায়েজিদ বোস্তামি: মাতৃভক্তির এক অনন্য উদাহরণ