Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, শুক্রবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৫,   বৈশাখ ১২ ১৪৩২

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৭:২৩, ১০ আগস্ট ২০২২

ডলার সঙ্কট: খোলা বাজারে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে উঁচু দরে চলছে কেনাবেচা

রাজধানীর বেশিরভাগ মানি এক্সচেঞ্জ হাউসে ডলার সংকট চলছে

রাজধানীর বেশিরভাগ মানি এক্সচেঞ্জ হাউসে ডলার সংকট চলছে


চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অন্যান্য দেশের মতো বিভিন্ন খাতে প্রভাব ভোগ করছে বাংলাদেশও। ডিজেল, তেল, গমের পাশাপাশি দেশের বাজারে বর্তমানে ডলার সঙ্কট দেখা দিয়েছে। রাজধানীসহ দেশের প্রায় সকল জায়গাতেই পাওয়া যাচ্ছে না ডলার। খোলাবাজারে পাওয়া গেলেও ডলারের দাম হাঁকা হচ্ছে অতিরিক্ত। তাছাড়া, অনেক জায়গায় এই সুযোগে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ডলার বিক্রি করছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবরের তথ্য বলছে, রাজধানীর বেশিরভাগ মানি এক্সচেঞ্জ হাউসে ডলার সংকট চলছে। বর্তমানে এসব এক্সচেঞ্জে বিক্রেতার তুলনায় ক্রেতার সংখ্যাই বেশি। বেশিরভাগই আসছেন ডলার কিনে নেয়ার জন্য। ক্রেতার তুলনায় ডলারের সরবরাহ খুবই কম বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। অন্যদিকে এতদিন যারা রাস্তায় খুচরা ডলার কেনাবেচা করতেন তারাও এখন গোপনে ব্যবসা করছেন। ক্রেতা দেখলেই ইশারা-ইঙ্গিতে বোঝাতে চাইছেন ডলার লাগবে কি না। এরপর মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করেই তাদের কাছ থেকে কেনা যাচ্ছে ডলার। তবে তার জন্য গুনতে হচ্ছে বাড়তি অর্থ।

তবে এতে করেও চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত ডলারের সংস্থান হচ্ছে না। ফলে সাধারণ ক্রেতাকে বাড়তি দাম দিয়েই কিনেত হচ্ছে ডলার। খুচরা ও এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোতে প্রতি ডলারের জন্য ১১৫ থেকে ১১৮ টাকা পর্যন্ত খরচ করতে হচ্ছে। যা টাকার বিপরীতে এখন পর্যন্ত ডলারের সর্বোচ্চ দাম। তবে কোনো বিক্রেতা পেলে তার কাছ থেকে ১১২ থেকে ১১৪ টাকায় ডলার কিনে নিচ্ছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।

ডলার কারসাজির সঙ্গে জড়িত ৬ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সোমবার (৮ আগস্ট) পাঁচটি দেশি এবং একটি বিদেশি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর এ সংক্রান্ত একটি চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে। চিঠিতে ট্রেজারি বিভাগের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডলারের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার অভিযান শুরুর পর থেকেই পরিস্থিতি কঠিন হয়েছে। এখন পর্যাপ্ত ডলার নেই, ক্রেতা এলেও চাহিদা অনুযায়ী দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

বুধবার (১০ আগস্ট) অধিকাংশ মানি এক্সচেঞ্জ হাউস বলছে তাদের অনেকের কাছেই এখন নগদ ডলার নেই। কারো কাছে কোনো ক্রেতা এলে যেসব হাউসে নগদ ডলার আছে তাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে ক্রেতাকে সরবরাহ করা হয়।

তবে খুচরায় ডলার পাওয়া যাচ্ছে সহজেই। আগের মতো রাস্তায় বসে ডলার বিক্রি না করলেও তারা রাস্তায় অবস্থান করছেন। কোনো ক্রেতা পেলেই তার ডলার লাগবে কি না জানতে চাওয়া হচ্ছে। পরে ১১৭ থেকে ১১৮ টাকা দাম বলা হচ্ছে। এ দামে রাজি হলেই ক্রেতার হাতে চলে আসছে ডলার।

মৌলভীবাজার শহরের বেরীরপাড় পয়েন্টের রয়েল ম্যানসন মার্কেটের নিচ তলা ও আশপাশের এলাকায় অবৈধ বৈদেশিক মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আড়ালে চলছে এসব অবৈধ ব্যবসা। এতে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

সরেজমিনে দেখা যায়, রয়েল ম্যানসন মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় সোনালী ব্যাংকের বৈদেশিক বাণিজ্য শাখা। মার্কেটের নিচ তলার ডান দিকের তৃতীয় নম্বর দোকানটি দেখে মনে হবে এটি মোবাইলের চার্জার ও বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স পণ্য বিক্রির দোকান। সাংবাদিক পরিচয় গোপন করে দোকানের ক্যাশে বসা এক ব্যক্তির কাছে মানি এক্সচেঞ্জ করা যাবে কিনা- জানতে চাইলে তিনি আইনিউজকে বলেন, ‘যাবে, ডলার নাকি পাউন্ড।’ ১০ পাউন্ডের নোট বলায় তিনি বললেন, ‘পাউন্ড প্রতি ১২০ টাকা দেওয়া যাবে।’ তারপর অনেক বাকবিতণ্ডার পর পাউন্ড প্রতি ১৩০ টাকা দিতে রাজি হলেন। ১০ পাউন্ডের নোট এক্সচেঞ্জ করা হলো ১৩০০ টাকায়।

এভাবে প্রতিদিন সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে লাখ লাখ টাকার বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় করছে এই সংঘবদ্ধ চক্র। প্রশাসনের নাকের ডগায় চলছে এসব মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, মৌলভীবাজার জেলায় একটি মাত্র বৈদেশিক মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেটি হলো সৈয়দ মানি এক্সচেঞ্জ।

তবে জেলায় অন্তত শতাধিক অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে জমা দেওয়া অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানের তালিকাসহ একটি নথি ঢাকা পোস্টের কাছে এসেছে। তালিকায় অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান হিসেবে রয়েছে শহরের রয়েল ম্যানশনের তরফদার এন্টারপ্রাইজ, শাহ মোস্তফা টেলিকম, রুমন এন্টারপ্রাইজ, ফারিয়া ইলেট্রনিক্স, মদিনা ট্রেডার্স, এসএ ট্রাভেলস এন্ড কনসাল্টেড, কোরেমি ট্রেডার্স, জিসান এন্টারপ্রাইজ, এফ ইলেকট্রনিক্স, আহমদ ম্যানশনের নিউ জলি ক্লথ স্টোরের নাম।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সৈয়দ মানি এক্সচেঞ্জের মালিক সৈয়দ ফয়ছল আহমদ আইনিউজের প্রতিবেদককে বলেন,  আমি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অনুমোদন নিয়ে সুনামের সঙ্গে নির্দেশনা মোতাবেক ব্যবসা করছি। কিন্তু সোনালী ব্যাংকের নিচে ও আশাপাশ এলাকায় অবৈধভাবে ১৫-২০ বছর ধরে লাইসেন্স ও অনুমোদন ছাড়াই ব্যবসা করছে একটি চক্র। ওরা কীভাবে ব্যবসা করছে এটা প্রশাসনের দেখার বিষয়। অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জের কারণে সরকার প্রচুর রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এখন আমরা যে পরিমাণ রাজস্ব দেই, তার থেকে আরও বেশি রাজস্ব দিতে পারব। সরকার উপকৃত হবে।

সোনালী ব্যাংকের বৈদেশিক বাণিজ্য শাখা মৌলভীবাজারের ব্যবস্থাপক মো. আজিজুল হক রাসেল  বলেন, অবৈধভাবে কিংবা সরকারের চ্যানেলের বাহিরে কেউ বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন করলে অবশ্যই সরকার রাজস্ব হারাবে। এসব অবৈধ চ্যানেল বন্ধ করা প্রয়োজন।

এদিকে, ডলার কারসাজির সঙ্গে জড়িত ৬ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সোমবার (৮ আগস্ট) পাঁচটি দেশি এবং একটি বিদেশি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর এ সংক্রান্ত একটি চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে। চিঠিতে ট্রেজারি বিভাগের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন- যারা খোলা বাজারে ডলারের অবৈধ ব্যবসা করছে আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। এখন পর্যন্ত পাঁচটি মানি এক্সচেঞ্জ হাউসের লাইসেন্স স্থগিত করা হয়েছে। পাশাপাশি ৪৫টিকে কারণ দর্শাতে (শোকজ) বলা হয়েছে। শোকজের পাশাপাশি আরও ৯টি প্রতিষ্ঠানকে সিলগালা করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স না নিয়েই ব্যবসা করে আসছিল।

উল্লেখ্য, গত সোমবার (৮ আগস্ট) ২৫ পয়সা বৃদ্ধি করে আন্তঃব্যাংকে ডলারের নতুন দাম ৯৪ টাকা ৯৫ পয়সা বেঁধে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সোমবার ১৩৯ মিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

দেখুন আইনিউজের ভিডিও গ্যালারি

গ্রিসের বস্তিতে বাংলাদেশীদের মানবেতর জীবন, অধিকাংশই সিলেটি

সৌদি আরবে মেয়েকে নির্যাতনের খবরে মায়ের আহাজারি-কান্না

গ্রিসে পাঁচ বছরের ভিসা পাবে বাংলাদেশিরা

বাবার হাত ধরে স্কুলে যাওয়ার পথে হঠাৎ দেয়াল চাপায় হারিয়ে গেল ছেলেটি

Green Tea
সর্বশেষ
জনপ্রিয়