শ্যামলাল গোসাঁই
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় নবাব সলিমুল্লাহর ক্রেডিট যেখানে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় নবাব সলিমুল্লাহর ক্রেডিট
নবাব সলিমুল্লাহ খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য ৬০০ একর জমি দান করেছিলেন। এমন একটি অবাস্তব কথা প্রচার করে কিছু মুসলমান বলতে চাচ্ছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির পুরা ক্রেডিট নবাব সলিমুল্লাহ খানের। অথচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে নবাব সলিমুল্লাহ খানের ক্রেডিট ভূমি বা অর্থ দানে নয়। অন্য কিছুতে। সেটা কী এই লেখায় অনুসন্ধান চালাব।
শুরুতেই দান করার কথা বললে, সলিমুল্লাহ খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য দান করেছিলেন মাত্র ৫ হাজার টাকা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পেছনে সলিমুল্লাহর চেয়ে বেশি (পঞ্চাশ হাজার টাকা) দান করেছিলেন রানী দিনমণি নামের সেসময়ের একজন প্রভাবশালী হিন্দু নারী। যিনি একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণে অবদান রেখেছেন। তাই, দানের হিসেবে যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পেছনে ক্রেডিট কার বলা হয়? তাহলে ওই হিন্দু নারী রানী দিনমণির ক্রেডিটই বেশি। সলিমুল্লাহ যেখানে ৫ হাজার টাকা দান করেছিলেন রানী দিনমণি দান করেছিলেন ৫০ হাজার। তাছাড়া, নবাব সলিমুল্লাহ'র ৬০০ একর জমিদান করার ব্যাপারটির তো ঐতিহাসিক কোনও সত্যতাই নেই। কেউ কেউ বলেন কলকাতা কমিশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে সেসময়কার রিপোর্টে ৬০০ একর জমিদানের কথা উল্লেখ আছে। রিপোর্টটি যারা পড়েছেন জমির এই উল্লেখ থাকাকেও একটি মিথ্যা প্রচার বলে জানিয়েছেন। আদতে রিপোর্টে এমন কিছুর উল্লেখ নেই।
অর্থ দান বা ভূমি দানের দিক থেকে নবাব সলিমুল্লাহ খান সেরকম কিছুই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য করতে পারেন নি। তিনি দান করেছিলেন মাত্র ৫ হাজার টাকা। রানী দিনমণির চেয়ে ৪৫ হাজার কম। তাই এখানে উনার ক্রেডিট অন্যদের তুলনায় কম। কিন্তু, নবাব সলিমুল্লাহ'র ক্রেডিট পশ্চিমবঙ্গের মুসলমান ও কতিপয় প্রভাবশালী হিন্দুদের আপত্তি সত্ত্বেও পূর্ববঙ্গের ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে লর্ড হার্ডিঞ্জকে রাজি করানো। সেসময় অনেকেই চাচ্ছিলেন না পূর্ববঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হোক। অপরদিকে, বঙ্গভঙ্গ রদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে বঙ্গবাসীর জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা চেয়েছিলেন নবাব সলিমুল্লাহ ও তাঁর দোসররা।
যাহোক, তাই বলে যে নবাব সলিমুল্লাহ খানের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার নেপথ্যে কোনো ভূমিকা, অবদানই নেই তা ভাবা ঠিক হবে না। ১৯১২ সালের ২ জুন ভারতের ভাইসরয় তৎকালীন লর্ড হার্ডিঞ্জ বঙ্গবাসীদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। এই আশ্বাসের নেপথ্যের মানুষটি নবাব সলিমুল্লাহ। হার্ডিঞ্জ এই ঘোষণা দেওয়ার দুই-তিন আগে নবাব সলিমুল্লাহ খান, নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী, শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হকরা হার্ডিঞ্জের কাছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অনুরোধ জানান। লর্ড হার্ডিঞ্জকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য রাজি করানোর কাজটি করেছিলেন নবাব সলিমুল্লাহ খান। কিন্তু, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা নিয়ে আশঙ্কা দেখা দেয়। ১৯১৭ সালের মার্চ মাসে ওই অবস্থায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারি বিল পাশ করিয়ে আনেন নবাব পরিবার।
তাই, বলতে হয় অর্থ দান বা ভূমি দানের দিক থেকে নবাব সলিমুল্লাহ খান সেরকম কিছুই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য করতে পারেন নি। তিনি দান করেছিলেন মাত্র ৫ হাজার টাকা। রানী দিনমণির চেয়ে ৪৫ হাজার কম। তাই এখানে উনার ক্রেডিট অন্যদের তুলনায় কম। কিন্তু, নবাব সলিমুল্লাহ'র ক্রেডিট পশ্চিমবঙ্গের মুসলমান ও কতিপয় প্রভাবশালী হিন্দুদের আপত্তি সত্ত্বেও পূর্ববঙ্গের ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে লর্ড হার্ডিঞ্জকে রাজি করানো। সেসময় অনেকেই চাচ্ছিলেন না পূর্ববঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হোক। অপরদিকে, বঙ্গভঙ্গ রদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে বঙ্গবাসীর জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা চেয়েছিলেন নবাব সলিমুল্লাহ ও তাঁর দোসররা। তাই, আমার মনে হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কারো একার দান করা ভূমিতে প্রতিষ্ঠিত, রবীন্দ্রনাথ এটার বিরোধীতা করেছিলেন এসব আলাপ বাতুলতা মাত্র। এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় ফিজিক্যালি অর্থ, বিত্ত দিয়ে নবাব সলিমুল্লাহ খানের চেয়ে বেশি অবদান রেখেছেন রানী দিনমণি, রবার্ট মিটফোর্ড। আবার টেকনিক্যালি দিনমণি, রবার্ট মিটফোর্ড থেকে বেশি অবদান নবাব সলিমুল্লাহ খানের।
লেখক: শ্যামলাল গোসাঁই, কবি ও সংস্কৃতিকর্মী
- বাংলাদেশে শিশু শ্রম: কারণ ও করণীয়
- ২০২৩ সালে কী সত্যিই ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ আসছে?
- পনেরো আগস্ট পরবর্তী রাজনৈতিক দ্বন্ধ
মোশতাক বললেও মন্ত্রীদের কেউ সেদিন বঙ্গবন্ধুর লাশের সঙ্গে যায়নি! - করোনা যেভাবে চিকিৎসকদের শ্রেণীচ্যুত করলো
- চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সমস্যা এবং সম্ভাবনা
- ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কুকুর স্থানান্তরকরণ ও ভবিষ্যৎ
- শরীফার গল্প পড়তে আমাদের এতো কেন সমস্যা?
- ফিলিস্তিনে প্রাণ হারাচ্ছেন গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা
- মহান মুক্তিযুদ্ধে বিদেশী গণমাধ্যমের ভূমিকা
- রেমডেসিভির একটি অপ্রমাণিত ট্রায়াল ড্রাগ