Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, সোমবার   ২১ এপ্রিল ২০২৫,   বৈশাখ ৭ ১৪৩২

আই নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৪:০১, ১৩ মার্চ ২০২৪

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গণ-ইফতার কর্মসূচি পালনের ডাক 

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) ও নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) ইফতার পার্টিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গণ-ইফতার কর্মসূচি পালন করেছে ও পালন করার ডাক দিয়েছেন।

গণ-ইফতার কর্মসূচি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরো অনেক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পালন করা হয়েছে ও পালন করার ডাক দিয়েছে।

মঙ্গলবার (১২ মার্চ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) পায়রা চত্বরে এই গণ-ইফতার আয়োজন করে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ, অনুষদ ও ইন্সটিটিউটের কয়েক শ’ শিক্ষার্থী অংশ নেয়।

শিক্ষার্থীরা আসরের নামাজের পর থেকেই একে একে জড় হতে থাকে। এরপর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে কুরআন তিলাওয়াত, হামদ-নাত ও ইসলামি বিভিন্ন পরিবেশনা করতে থাকে। এরপর তারা ইফতার পার্টিতে নিষেধাজ্ঞার জবাবে বিভিন্ন বক্তব্য প্রদান করেন।

বক্তব্যে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিদ হাসান বলেন, বাংলাদেশের মুসলমানদের হাজার বছরের ঐতিহ্য রোজা রাখা, ইফতার করা। কোনো একটা গোষ্ঠী চক্রান্ত করে মুসলমানদের সংস্কৃতিতে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করছে। আমাদের এই অপশক্তিদের জবাব দিতে হবে। ধর্মীয় আবেগের বাইরে গিয়ে রাজনৈতিকভাবে তাদের মোকাবেলা করতে হবে। এর জববে সারাদেশে গণসচেতনতা তৈরীর বিকল্প নেই।

শিক্ষার্থী হাসিব আল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষগুলো কারো প্রেসক্রিপশনে ক্যাম্পাসে ইফতার পার্টি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিবে আর এই দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা সেটা সহ্য করবে এটা ভাবা বোকামি। তার প্রমাণ আজকের এই গণ ইফতার কর্মসূচি। সেই সব কূচক্রীরা তাকিয়ে দেখুক এখানে কত শিক্ষার্থী সমবেত হয়ে ইফতার করছে।

শাওন মাহমুদ বলেন, শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়। বাংলাদেশের বড় বড় প্রায় সব ক্যাম্পাসেই আজকে প্রতিবাদী ইফতার অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে চাইলেই মুসলমানদের সংস্কৃতিকে স্তব্ধ করে দেয়া যায় না। এ দেশের মানুষ, এ দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমান তা হতে দেবে না। এরকম গণ-ইফতারের আয়োজন আমরা এখন থেকে আরো বেশি বেশি করব।

দুই ক্যাম্পাসে ইফতার পার্টিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় জবিতে নীরব প্রতিবাদ জানিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।

ইফতারে অংশ নেয়া শিক্ষার্থী শিহাব বলেন, আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা এ গণ-ইফতার কর্মসূচি পালন করেছি। আমরা ওই দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে বলব, তারা যেন তাদের আদেশ প্রত্যাহার করে নেয়। আশা করি আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন যেন এ ধরনের সিদ্ধান্ত না নেয়।

এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী‌রা ওই দুই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধনের আয়োজন করলে তাতে বাধা প্রয়োগ করে জবির প্রক্টোরিয়াল বডি।

বেলা ২টায় বাদ জোহর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে মিছিলটি শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে আসলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাতে বাধা সৃষ্টি করে।

এদিকে বুধবার (১৩ মার্চ) রমজানের দ্বিতীয় দিনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার চত্বরে শিক্ষার্থীরা গণ-ইফতার কর্মসূচি পালন করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

এ বিষয়ে জাহিদ এইচ জোহা নামের এক রাবি শিক্ষার্থী বলেন, বাঙালির চিরায়ত মুসলিম সংস্কৃতি রমজান, সেহেরি ও ইফতার। এই সংস্কৃতি ও ধর্মীয় রীতির ওপর হস্তক্ষেপ কখনও কাম্য নয়। সম্প্রতি শাবিপ্রবি ও নোবিপ্রবিতে ঘটে যাওয়া ঘটনায় দুই ক্যাম্পাসের সাধারণ শিক্ষার্থীদের সংহতি জানিয়ে আমরাও আয়োজন করছি গণ ইফতার কর্মসূচি। আগামীকাল আসরের নামাজের পরই আমাদের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এ কর্মসূচি পালন করব। সবাইকে আসার অনুরোধ জানাচ্ছি।

আরমানুল ইসলাম নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ইসলাম হলো চারা বীজের মতো। এটাকে যতই মাটির নিচে পুতে ফেলতে চাইবে ততই মাটি ফেটে ওপরের দিকে উঠবে। রাবির গণ-ইফতার কর্মসূচি তার জ্বলন্ত উদাহরণ।

শিক্ষার্থীদের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ বলেন, আমার মনে হয় কোনো একটা ইস্যুকে ঘুরিয়ে দেয়ার জন্য দুই বিশ্ববিদ্যালয় এই জঘন্যতম কাজটা করেছে। শিক্ষার্থীরা তো আর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশ্নের কাছে কোনো ফান্ডিং চাইনি। তাহলে নিষিদ্ধের কথাটা কেন আসলো? এটা খুবই নিন্দনীয় একটি কাজ করেছে।

তিনি আরো বলেন, রোজা, ইফতার মুসলিমদের জন্য খুবই স্পর্শকাতর একটা বিষয়। ইফতার ধর্মীয় গণ্ডি পেরিয়ে সার্বজনীনতায় রূপ নিয়েছে। সেই ইফতারিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে যেমন আমাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছে, তেমনি আমাদের সংস্কৃতির ওপরও আঘাত করা হয়েছে। এরই প্রতিবাদে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যে গণ-ইফতার কর্মসূচির আয়োজন করেছে এটাকে আমি প্রশংসা করছি। প্রতিবাদ এভাবেই করা উচিত। আমি যদি সুযোগ পাই তাহলে কালকে রাবি শিক্ষার্থীদের আয়োজিত গণ-ইফতার কর্মসূচিতে আমি অংশগ্রহণ করব।

আবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ২০০ সাধারণ শিক্ষার্থী এই প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা রোজার গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে আলোচনা করেন এবং শাবিপ্রবি ও নোবিপ্রবিতে ইফতার পার্টিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় দুই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।

অন্যদিকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গোলচত্বরে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে এ গণ-ইফতার কর্মসূচি পালন করে।

আই নিউজ/এইচএ 

আরও পড়ুন
Green Tea
সর্বশেষ
জনপ্রিয়