Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৫,   বৈশাখ ৩ ১৪৩২

হেলাল আহমেদ, আই নিউজ

প্রকাশিত: ১৩:০০, ৭ নভেম্বর ২০২৩
আপডেট: ১৩:১৮, ৭ নভেম্বর ২০২৩

ব্যবসায় এগোলেও শ্রমিক মজুরিতে পিছিয়ে বাংলাদেশ 

বিগত বছরগুলোতে দেশে পোশাক শিল্পে রপ্তানির চিত্র। ছবি- আই নিউজ

বিগত বছরগুলোতে দেশে পোশাক শিল্পে রপ্তানির চিত্র। ছবি- আই নিউজ

গত এক যুগ ধরে অনেকটা সরল পথ ধরে এগিয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের তিন মেয়াদ সময়কালে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে অনেক উন্নতি ঘটেছে। বিশ্ব জুড়ে আরো সম্প্রসারিত হয়েছে দেশের পোশাক শিল্প খাত। বিশ্বের দ্বিতীয় তৈরি পোশাক শিল্পের রপ্তানিকারক দেশ বাংলাদেশ। তবু, এখানে শ্রমিকদের মজুরি অনেকটাই তলানীতে। গত দশ বছরে পোশাক রপ্তানি ১৩০ শতাংশ বাড়লেও সেই হারে বাড়ে নি শ্রমিকদের মজুরি। ফলে, সম্প্রতি মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন ও বিক্ষোভে নামেন পোশাক শিল্পের শ্রমিকরা। 

বিভিন্ন পত্র পত্রিকার বলছে, গত দশ বছরেই (২০১৩ থেকে ২০২২ সাল) তৈরি পোশাক শিল্পের রপ্তানি বেড়েছে ১৩০ শতাংশ। ব্যবসা বাড়ার পাশাপাশি সরকারের সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার দিক থেকেও এগিয়ে রয়েছে দেশের পোশাক শিল্প। রয়েছে এই শিল্পের জন্য নগদ সহায়তা, মূসক অব্যাহতি, রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) থেকে স্বল্প সুদে ঋণ নেওয়া এবং শুল্কমুক্ত সুবিধায় কাঁচামাল আমদানির সুবিধাও রয়েছে। তবে এতোকিছুতে বাংলাদেশের পোশাক খাত এগিয়ে থাকলেও পিছিয়ে রয়েছে কেবল শ্রমিকের মজুরি দেওয়ার ক্ষেত্রে। 

মজুরি বোর্ডে শ্রমিকদের প্রতিনিধিরা ২০ হাজার ৩৯৩ টাকা মজুরি প্রস্তাব করলেও মালিকপক্ষ বিপরীতে প্রস্তাব দেয় তাদের দাবির প্রায় অর্ধেক বা ১০ হাজার ৪০০ টাকা। ফলে, ক্ষুব্ধ হয়ে শ্রমিকরা আন্দোলনে নামেন। আন্দোলন সহিংস রূপ নেয়ার পর মালিকপক্ষ বোর্ডে নতুন মজুরি প্রস্তাব দেয়ার প্রস্তিশ্রুতি দিয়েছে। তার আগে শ্রমিকদের আন্দোলন-বিক্ষোভে দুই জন কিশোর পোশাক শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছেন। 

পোশাক শিল্পে বিশ্বে বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশ ভারত, কম্বোডিয়া, চীন, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম ও পাকিস্তান। এর মধ্যে অনেক দেশের পোশাক শিল্পে বাংলাদেশের মতো সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয় না। তবু, শ্রমিকের মজুরি প্রদানের ক্ষেত্রে এই সবগুলো দেশ এগিয়ে আছে বাংলাদেশের থেকে। এইসব দেশের পোশাক শ্রমিকরা বাংলাদেশের শ্রমিকদের থেকে বেশি মজুরি পান। 

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ), ম্যাপড ইন বাংলাদেশ, সিপিডি সূত্রের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে একজন পোশাক শ্রমিক গড়ে ৭২.৪০ ডলার মজুরি হিসেবে পান। বিপরীতে ভিয়েতনামের শ্রমিকরা মজুরি পান ১৭০.৩৫ ডলার। যা বাংলাদেশি শ্রমিকদের মজুরির প্রায় ডাবল। এ ছাড়াও, চীনের শ্রমিকরা পান ৩০০ ডলার, ভারতে ১৭১.১৮, ইন্দোনেশিয়ায় ২৪২.৯৪ ডলার এবং কম্বোডিয়ার পোশাক শ্রমিকরা মজুরি পান ২০০ ডলার। এই দেশগুলোর মধ্যে সবথেকে কম মজুরি পান বাংলাদেশের পোশাক শ্রমিকরা। এই বেতন দিয়ে বর্তমান ঊর্ধ্বগতির বাজারে তাদের টিকে থাকা মুশকিল বলে জানিয়েছেন দেশের শ্রমিকরা।

পোশাক শিল্পে প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে দেশের মজুরি পার্থক্য। ছবি- আই নিউজ 


তথ্য বলছে, ২০০৬ সালে বাংলাদেশে পোশাক খাতে রপ্তানি হয়েছিল ৮৯৩ কোটি ডলার। এর চার বছর পর ২০১০ সালে রপ্তানি বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৪৮৫ কোটি ডলারে। ২০১৩, ২০১৮ এবং সর্বশেষ ২০২২ সালে ক্রমাগতভাবে পোশাক রপ্তানি বেড়ে বর্তমান এই খাত দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৫৭০ কোটি ডলারের ঘরে। বিপরীতে এই খাতের শ্রমিকরা মজুরি পাচ্ছেন মাত্র ৭২ ডলারের মতো। 

প্রত্যেকবার মজুরি বাড়ানোর সময় বিভিন্ন অজুহাতে মালিকপক্ষ কম মজুরি বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয় নি। মজুরি বোর্ডে শ্রমিকদের প্রতিনিধিরা ২০ হাজার ৩৯৩ টাকা মজুরি প্রস্তাব করলেও মালিকপক্ষ বিপরীতে প্রস্তাব দেয় তাদের দাবির প্রায় অর্ধেক বা ১০ হাজার ৪০০ টাকা। ফলে, ক্ষুব্ধ হয়ে শ্রমিকরা আন্দোলনে নামেন। আন্দোলন সহিংস রূপ নেয়ার পর মালিকপক্ষ বোর্ডে নতুন মজুরি প্রস্তাব দেয়ার প্রস্তিশ্রুতি দিয়েছে। তার আগে শ্রমিকদের আন্দোলন-বিক্ষোভে দুই জন কিশোর পোশাক শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছেন। 

আজ মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) নিম্নতম মজুরি বোর্ডের ষষ্ঠ সভা অনুষ্ঠিত হবে। সম্ভাবনা রয়েছে এই সভায় শ্রমিকদের মজুরি চূড়ান্ত হতে পারে। এক সূত্রে জানা গেছে, মালিকপক্ষ আগের প্রস্তাবিত মজুরি থেকে দুই হাজার বাড়িয়ে ১২ হাজার টাকার বেশি মজুরির প্রস্তাব দিতে পারেন। যদিও মালিকদের প্রস্তাব করা এই মজুরিতে কাজ করতে পোশাক শ্রমিকরা রাজি হবেন কি-না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন শ্রমিক সংগঠনের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ। 

আই নিউজ/এইচএ 

Green Tea
সর্বশেষ
জনপ্রিয়