Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৫,   বৈশাখ ৪ ১৪৩২

জীবন পাল, সিলেট

প্রকাশিত: ১৯:৩০, ১০ আগস্ট ২০২২
আপডেট: ১৯:৩২, ১০ আগস্ট ২০২২

ভাড়া বৃদ্ধি হওয়ায় সিলেটের রেল স্টেশনগুলোতে বেড়েছে যাত্রীর চাপ

বাস ভাড়া বৃদ্ধি পাওয়ায় সিলেটে বেশিরভাগ যাত্রীই ট্রেনের দিকে ঝুঁকছেন

বাস ভাড়া বৃদ্ধি পাওয়ায় সিলেটে বেশিরভাগ যাত্রীই ট্রেনের দিকে ঝুঁকছেন

শনিবার (৬ আগষ্ট) শ্রীমঙ্গল থেকে সিলেট  আসেন প্রীতম। আসার সময় হবিগঞ্জ-সিলেট বিরতিহীন বাসে ১৫০ টাকা ভাড়া দিয়ে এসেছেন। অথচ রোববার (৭ আগষ্ট)  শ্রীমঙ্গল ফিরে যাবার সময় সেই হবিগঞ্জ-সিলেট বিরতিহীন বাসে ভাড়া দিয়ে যেতে হয় ১৮৫ টাকা। হঠাৎ করে ভাড়া বৃদ্ধিতে একরকম হিমসিম খেতে হচ্ছে প্রীতমের মতো অনেককেই।

শ্রীমঙ্গলের একটি চা বাগানে কর্মরত এই কর্মকর্তা বলেন, এখন থেকে ট্রেনে যাতায়াত করতে হবে। যেহেতু ব্যক্তিগত কাজে ঘনঘন সিলেট আসতে হয়, সেহেতু এত ভাড়া দিয়ে বাসে যাতায়াত করাটা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে। ট্রেনে যেখানে ১১০ টাকা ভাড়া দিয়ে শ্রীমঙ্গল থেকে সিলেট আসা-যাওয়া করা যায়, সেখানে ১৮৫ টাকা দিয়ে যাতায়াত করাটা আমার মত যাত্রীদের অন্য অতিরিক্ত বলে মনে করছি। এই যাত্রীর     মতে, ভাড়া বৃদ্ধিতে ট্রেনের যাত্রী বাড়বে। কেননা, ট্রেনের ভাড়া বাসের ভাড়ার তুলনায় অর্ধেক। আমি নিজেও তো পরেরবার থেকে ট্রেনেই আসা যাওয়া করবো।

বাসের ভাড়া বৃদ্ধির কারণে অনেকে যাত্রীই ট্রেনে যাতায়াত করার দিকে ঝুঁকছেন। এতে করে একদিকে যেমন আরামে যাতায়াত করা সম্ভব, তেমনি ভাড়াও কম লাগছে।

ভাড়া বৃদ্ধির পর সিলেট - হবিগঞ্জ ভাড়া নির্ধারন করা হয় প্রতি কিলোমিটার ২.২০ পয়সা। বাস স্টপেজগুলোর বর্তমান ভাড়া যথাক্রমে - সিলেট-শেরপুর ৮১.৪ টাকা, সিলেট-মৌলভীবাজার ১৩৮.৬ টাকা,সিলেট-শ্রীমঙ্গল ১৮৪.৮ টাকা,সিলেট-মীরপুর ২৩৭.৬ টাকা,সিলেট-শায়েস্তাগঞ্জ ২৪৮.৬ টাকা,সিলেট-হবিগঞ্জ ২৮১.৬ টাকা।

সরেজমিনে সিলেট স্টেশনে ঘুরে দেখা যায় অন্যান্য দিনের তুলনায় যাত্রীদের ভিড় ছিল বেশি। কিছুটা ঈদে ঘরমুখো মানুষের মতোই অবস্থা। অধিকাংশ যাত্রীদের একটাই কথা- যে হারে ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে তা দিয়ে বাসে যাতায়াত করা কষ্টসাধ্য। সেজন্য বিকল্প হিসেবে ট্রেনে যাতায়াত করার জন্য স্টেশন ভীড় করা। ট্রেনে যাতায়াত করাটা স্বস্তির পাশাপাশি সাশ্রয়ও বটে।

এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মো. সাখাওয়াত হোসেন আইনিউজকে জানান, তেলের মূল্য বৃদ্ধিতে বাস ভাড়া বৃদ্ধির কারণে ট্রেনে যাত্রীর চাপ বেড়েছে কয়েকগুণ। শতকরা ৫০ ভাগ যাত্রী এসে ভিড় করছেন স্টেশনে। এর ফলে প্রচুর স্ট্যান্ডিং টিকিট বিক্রি হচ্ছে।

কথা বলে জানা যায়, পাহাড়িকা, উদয়নে ডাবলের চাইতেও বেশি টিকিট বিক্রি হচ্ছে।  বলা চলে ৪ ডাবল টিকেট বিক্রি হচ্ছে। ভাড়া কম এবং আরামদায়ক হওয়ায় ট্রেনের দিকে যাত্রীদের ঝুঁকে পড়ার মূল কারণ হিসেবে আখ্যায়িত করছেন রেলওয়ের এই কর্মকর্তা। ট্রেনের ভাড়া বাড়লেও চাপটা কমবেনা বলেও আশাবাদী তিনি।

শ্রীমঙ্গল স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, সিলেট থেকে ৪০ টি আসনের স্থলে টিকিট বিক্রি হচ্ছে ১০০- ১২০ টি। সিস্টেম না থাকলেও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে যাত্রীদের যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতেই এত স্ট্যান্ডিং টিকিট দেওয়া হচ্ছে। ট্রেনে যাত্রী চাপ আগে থেকে থাকলেও তেলের মূল্য বৃদ্ধিতে চাপটা আরো বেশি বেড়েছে। কর্তৃপক্ষ টিকিটের দাম বাড়ানো প্রয়োজন মনে করলে দাম বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে ট্রেনের টিকিটের দাম বৃদ্ধি পেলেও যাত্রী চাপটা কিন্তু কমবে না। থাকবেই।

সিলেট রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার আবু নাসের মোহাম্মদ রাসেল জানান, তেলের মূল্য বৃদ্ধির ফলে গত রোববার থেকে ট্রেনের যাত্রী চাপ আগের তুলনায় বেড়েছে। বাইরোডে ভাড়া যেহেতু প্রায় ডাবল হয়ে গেছে, আর সেই তুলনায় ট্রেনের ভাড়া যেহেতু কম সেজন্য স্ট্যান্ডিং টিকিট নিয়ে দাঁড়িয়ে হলেও যাত্রীরা ট্রেনে যাতায়াত করছেন।

তিনি জানান, আগে যেখানে সামান্য স্ট্যান্ডিং টিকিট দেওয়া লাগতো। সেখানে এখন দেখা যাচ্ছে চাহিদার কারণে প্রচুর স্ট্যান্ডিং টিকিট দিতে হচ্ছে যাত্রীদের অনুরোধে। বিশেষ করে রোড সাইডের যাত্রীরা আমাদেরকে অনুরোধ করো স্ট্যান্ডিং টিকিট নিয়ে হলেও দাঁড়িয়ে যাবার আগ্রহ প্রকাশ করছেন। এতে করে দেখা গেছে আমাদের নির্দিষ্ট কোটার বাইরেও স্ট্যান্ডিং টিকিট দিতে হচ্ছে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে।

তিনি বলেন, দেখা গেছে কুলাউড়ায় আমাদের টিকিট বরাদ্দ ১০০ টি। সেটার পরেও দেখা যাচ্ছে আরো ১০০-১৫০ টি স্ট্যান্ডিং টিকিট দিতে হচ্ছে। আবার দেখা যাচ্ছে শ্রীমঙ্গলের ৪০-৫০ টি টিকিট বরাদ্দ। সেখানে এখন এর থেকে ডাবল স্ট্যান্ডিং টিকিট দিতে হচ্ছে।

তবে যারা ঢাকা কিংবা চট্টগ্রাম যাবেন তাদের কিন্তু এভাবে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ পথ যাতায়াত করা সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে দেখা গেছে যারা কুলাউড়া, শ্রীমঙ্গল, শায়েস্তাগঞ্জ, আজমপুর, নোয়াপাড়া, হরশপুর, ভৈরব, আখাউড়া, কুমিল্লা যাবেন, তারা স্ট্যান্ডিং টিকিট নিয়ে হলেও ট্রেনে তাদের গন্তব্যে যাচ্ছেন।

সিলেট থেকে মোট ৬ টি আন্তঃনগর  ট্রেন ছেড়ে যায়। যার মধ্যে কালনী এক্সপ্রেস ভোর     ৬:১৫    মিনিটে (শুক্রবার বন্ধ) , পাহাড়ীকা এক্সপ্রেস সকাল ১০:১৫ মিনিটে (শনিবার বন্ধ) জয়ন্তীকা  এক্সপ্রেস    সকাল ১১:১৫ মিনিটে (বৃহস্পতিবার বন্ধ), পারাবত এক্সপ্রেস    বিকেল    ৩:৪৫    মিনিটে (মঙ্গলবার বন্ধ),    উদয়ন এক্সপ্রেস রাত    ৮:৩০ মিনিটে (রবিবার বন্ধ)  এবং    উপবন এক্সপ্রেস  প্রতিদিন রাত ১১ঃ ৩০ মিনিটে (সোমবার বন্ধ) সিলেট স্টেশন থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে যায়।

এদিকে ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে যাত্রী ও বাস মালিকদের বর্তমান অবস্থাটা জানতে চাইলে হবিগঞ্জ মোটর মালিক গ্রুপ মৌলভীবাজার আঞ্চলিক শাখার সুপারভাইজার মো. হাসানুল হক রিমন আইনিউজকে বলেন, যাত্রীদের বুঝিয়ে দিতে হচ্ছে যে ডিজেলের লিটার প্রতি ৩৪ টাকা বৃষ্টি হওয়ার কারণেই আমাদের এই ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে। যাত্রীদের বুঝিয়ে বললে যাত্রীরা বুঝেন। এটা নিয়ে এখন পর্যন্ত যাত্রীদের সাথে  আমাদের কোন ঝামেলা হয়নি। তবে আমরা চাচ্ছি যেন তেলের দামরা দ্রুত কমে যায়। যাতে করে আমরাও যাত্রীদেরকে কম ভাড়ায় যাতায়াতের সুবিধা করে দিতে পারি।

হবিগঞ্জ মোটর মালিক গ্রুপের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী জানা যায়,  সিলেট - হবিগঞ্জ ভাড়া বৃদ্ধির পূর্বে ভাড়া ছিল প্রতি কিলোমিটার ১.৮০ পয়সা। বাস স্টপেজগুলোর ভাড়া ছিল যথাক্রমে - সিলেট-শেরপুর ৬৬.৬ পয়সা, সিলেট-মৌলভীবাজার ১১৩.৪ টাকা,সিলেট-শ্রীমঙ্গল ১৫১.২ টাকা, সিলেট-মীরপুর ১৯৪.৪ টাকা,সিলেট-শায়েস্তাগঞ্জ ২০৩.৪ টাকা,সিলেট-হবিগঞ্জ ২৩০.৪ টাকা।

ভাড়া বৃদ্ধির পর সিলেট - হবিগঞ্জ ভাড়া নির্ধারন করা হয় প্রতি কিলোমিটার ২.২০ পয়সা। বাস স্টপেজগুলোর বর্তমান ভাড়া যথাক্রমে - সিলেট-শেরপুর ৮১.৪ টাকা, সিলেট-মৌলভীবাজার ১৩৮.৬ টাকা,সিলেট-শ্রীমঙ্গল ১৮৪.৮ টাকা,সিলেট-মীরপুর ২৩৭.৬ টাকা,সিলেট-শায়েস্তাগঞ্জ ২৪৮.৬ টাকা,সিলেট-হবিগঞ্জ ২৮১.৬ টাকা।

বাইপাসে সিলেট থেকে হবিগঞ্জের পূর্বে ভাড়া ছিল ১৮০ টাকা। তেলের দাম বৃদ্ধির পরে নতুন ভাড়া নির্ধারনের পর বর্তমান ভাড়া ২২০ টাকা।

হবিগঞ্জ মোটর মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক শংখ শুভ্র রায় জানান, যেহেতু তেলের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় এই ভাড়া বৃদ্ধি পেয়েছে সেহেতু সাধারণ মানুষ তা মেনে নিয়েছে। যাত্রীরা এখন পর্যন্ত ভাড়া নিয়ে কোন ঝামেলা করেনি। করার কথাও না। কেননা, আমরা প্রত্যেক বাসে আমাদের নির্ধারন করে দেওয়া ভাড়ার তালিকা দিয়ে দিয়েছি। যাতে করে চালক, কন্ট্রাকটরদের সাথে যাত্রীদের কোন ধরনের কথা-কাটাকাটি বা ঝামেলার সম্মুখীন হতে না হয়। তবে বলে রাখা ভাল যে, খুচরা টাকার ঝামেলা এড়াতে আমরা কিন্তু নির্ধারিত ভাড়ার চাইতে ৩-৪ টাকা ভাড়া কম নিচ্ছি।

আইনিউজ/জীবন/এইচএ

খুন আইনিউজের ভিডিও গ্যালারি

ওজনে ডিজেল কম, ফিলিং স্টেশনকে চল্লিশ হাজার টাকা জরিমানা || Eye News || Moulvibazar || Filling Station

রাত ৮টায় দোকান বন্ধ, ক্ষতির মুখে ব্যবসায়ীরা || Eye News

শেখ রাসেলকে নিয়ে লেখা কবিতা- `বিশ্বমানব হতেই তবে` ।। তাওফিকা মুজাহিদ ।। আবৃত্তি ।। EYE NEWS

৮০ বছর বয়সে বৃদ্ধা নূরজাহান বেগমের মানবেতর জীবন | Tea Stall | Old Woman | Moulvibazar | Eye News

Green Tea
সিলেট বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়