Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, রোববার   ২০ এপ্রিল ২০২৫,   বৈশাখ ৭ ১৪৩২

আই নিউজ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১২:৪৯, ১২ আগস্ট ২০২৩

ভূমধ্যসাগরেই সমাধি হলো নরসিংদীর ৯ যুবকের ইউরোপ স্বপ্ন 

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে অবৈধপথে ইতালি যাওয়ার প্রবণতা দিনদিন বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে স্বপ্নের টানে আর দালালদের প্রলোভনে দীর্ঘ বিপদসঙ্কুল পথ পাড়ি দিতে গিয়ে মৃ ত্যু র ঘটনাও। আবারও এরকমই একটি ঘটনা ঘটেছে নরসিংদীর বেলাবর ৯ যুবকের সঙ্গে। ইউরোপের স্বপ্নের বিভোর হয়ে দালালের প্রলোভনে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে যারা এখন নিখোঁজ। 

গত বুধবার মধ্যরাতে তাদের বহনকারী নৌকাটি ডুবে যায় বলে জানা গেছে। এতে দালালের প্রলোভনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভাগ্য বদলে তাদের ইতালি যাত্রা মাঝসমুদ্রেই থমকে যায়। এর কয়েক মাস আগেও একইভাবে ইতালি যাওয়ার পথে উপজেলার ১৩ যুবক নিখোঁজ হন। তারা বেলাবো উপজেলার নারায়ণপুর, চরউজিলাব ও সররাবাদ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা।

গতকাল শুক্রবার এ খবর পৌঁছার পর নিখোঁজ ৯ যুবকের পরিবারে দেখা দেয় শোকের মাতম। তাদের পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, উপজেলার দুলালকান্দি গ্রামের লাল মিয়ার ছেলে লিবিয়া প্রবাসী জাকির হোসেনের মাধ্যমে ইতালি যাওয়ার জন্য অলিখিত চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল তাদের। সে অনুযায়ী প্রত্যেকে দালাল জাকিরের বাবা লাল মিয়া ও ফুফু শাহিনুরকে ১২ থেকে ১৪ লাখ টাকা দিয়েছেন।

নিখোঁজ যুবকরা হলেন– উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের কাঙ্গালিয়া গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে মোখলেছ মিয়া (২০), একই গ্রামের হাছেন আলীর ছেলে আনোয়ার হোসেন কামাল (৩৫), দুলালকান্দি গ্রামের হারুন মিয়ার ছেলে মনির হোসেন (২২), একই গ্রামের মোতালিব মিয়ার ছেলে রবিউল (৩৩), ভাটেরচর গ্রামের হাছেন উদ্দীনের ছেলে মাসুদ রানা (৩৫), টান লক্ষ্মীপুর গ্রামের মরম আলীর ছেলে স্বাধীন মিয়া (২০), দড়িকান্দি গ্রামের আবু রায়হান (৩০), সল্লাবাদ ইউনিয়নের নিলক্ষীয়া গ্রামের আমান মিয়া (২৫) ও চরউজিলাব ইউনিয়নের দেওয়ানেরচর ফরাজি বাড়ির আলমাছ আলীর ছেলে ইমন মিয়া (২০)। এর আগে গত জুনেও লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার পথে ট্রলার ডুবে বেলাবর ১৩ যুবক নিখোঁজ হন। আজ পর্যন্ত তাদের খোঁজ মেলেনি।

নিখোঁজ যুবকদের পরিবারের সদস্যরা জানান, গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে জাকিরের মাধ্যমে লিবিয়া যান তারা। ১৫ দিনের মধ্যে ইতালি পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে টাকা নিলেও নিখোঁজ যুবকরা মাসের পর মাস ছিলেন লিবিয়ার গেম ঘর নামের বন্দিশিবিরে। সেখান থেকে গত বুধবার মধ্যরাতে ছোট্ট একটি ডিঙি নৌকায় তারা ইতালির উদ্দেশে রওনা দেন। ২৫ জন ধারণক্ষমতার ওই নৌকায় ওঠানো হয় ৫৫ যাত্রীকে। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে ভূমধ্যসাগরের লিবিয়া সীমান্তেই নৌকাটি ডুবে যায়। এতে তারাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার বেশ কয়েকজন সাগরে নিখোঁজ হন। 

এ খবর জানার পর বৃহস্পতিবার সকালে দালাল জাকিরের পরিবার ঘরে তালা দিয়ে পালিয়ে যায়। এতে সন্দেহ হলে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মিলন মিয়ার শরণাপন্ন হন নিখোঁজ যুবকদের পরিবারের সদস্যরা। পরে মিলন মিয়া লিবিয়ায় থাকা জাকিরের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করে ঘটনা জানতে পারেন।

নিখোঁজ মোখলেছ মিয়ার বড় বোন আর্জিনা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘গত বুধবার রাতে আমার জাকিরের ফুফু শাহিনুরের সঙ্গে কথা হয়। তখন তিনি বলেছিলেন, শুক্রবার তারা ইতালি যাবে। কিন্তু শুক্রবার ভাইয়ের নিখোঁজের খবর পেলাম। আমরা জাকিরের বাবার হাতে ১৪ লাখ টাকা দিয়েছি।’

রায়পুরা উপজেলার মাহমুদাবাদ গ্রামের হান্নান মিয়া বলেন, লিবিয়ায় গেম ঘরে তাদের সঙ্গে আমার ছেলে হিরা মিয়াও ছিল। সাগর উত্তাল শুনে আমি ছেলেকে ওই ডিঙিতে না ওঠার জন্য বলেছিলাম। নারায়ণপুর এলাকার জুটুন সূত্রধর নামে এক ছেলেও ওই নৌকায় ছিল। তাকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। জুটনের বাবা আমাকে ফোন করে ঘটনা জানালে আমি নিখোঁজ মোখলেছ ও কামালের বাড়িতে খবর দিতে এসেছি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মিলন মিয়া বলেন, যুবকদের স্বজনরা বারবার আমার কাছে আসছিলেন। আমি লিবিয়ায় জাকিরের মোবাইলে অনেকবার ফোন দিই। মিলন নামে জাকিরের এক সহযোগী কল ধরে তাদের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা জানান।
বেলাবর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আয়শা জান্নাত তাহেরা বলেন, আপনাদের মাধ্যমে খবর পেয়ে থানার ওসিকে জানিয়েছি। সরকারিভাবে নিখোঁজের কোনো তথ্য পাইনি।

আই নিউজ/এইচএ 

Green Tea
সর্বশেষ
জনপ্রিয়