Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, রোববার   ২০ এপ্রিল ২০২৫,   বৈশাখ ৭ ১৪৩২

সৈয়দা নুসরাত জাহান জ্যোতি ও তাহরিমা আক্তার রুমি 

প্রকাশিত: ১৮:১৯, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩

মহিলা সহায়তা কর্মসূচি: হাজারো নারীর ক্ষমতায়নের দিশারী 

মহিলা সহায়তা কর্মসূচি নামে রয়েছে সরকারের একটি বিশেষ কার্যক্রম।ছবি- আই নিউজ।

মহিলা সহায়তা কর্মসূচি নামে রয়েছে সরকারের একটি বিশেষ কার্যক্রম।ছবি- আই নিউজ।

দুই সন্তানের জননী করিমা (ছদ্মনাম)। দুর্বিষহ জীবনের থেকে উঠে আসা এক সাহসী নারী। সন্তানসহ তাকে অনাহারে ফেলে চলে যান তার স্বামী। তখন বাধ্য হয়ে আসেন সিলেটের মহিলা সহায়তা কর্মসূচিতে। এরপর আশ্রয় কেন্দ্রে মাথা গোঁজার ঠাই হয় করিমার। এখানে ২ সন্তানসহ ভালোভাবেই দিনাতিপাত করছেন। পাশাপাশি সেলাইয়ের কাজেও হয়ে ওঠেছেন পারদর্শী। 

স্বামী, শশুর-শাশুড়ীকে ডাকযোগে অভিযোগ সম্পর্কে অবহিত করা হলে তারা সাড়া দিয়ে অফিসে এসেছিলেন। বর্তমানে তার অভিযোগটি মহিলা সহায়তা কর্মসূচিতে মীমাংসার পর্যায়ে আছে। খুব শীগ্রই স্বামী-সন্তানসহ স্বাভাবিক জীবনযাপনের স্বপ্ন দেখছেন তিনি। 

নিয়মিত সেলাই প্রশিক্ষণ নেয়ায় এখন লক্ষ্য আত্মনির্ভরশীল হওয়ার। দিন বদলে গেল। এভাবে শুধু করিমাই নয় অসংখ্য নারীর পারিবারিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপন এবং ক্ষমতায়নের গল্প রচনা করেছে মহিলা সহায়তা কর্মসূচি। 

অসহায়, আশ্রয়হীন ও নির্যাতিত নারীদের প্রধানত আইনগত সহায়তা ও আশ্রয় প্রদানের জন্যে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে মহিলা সহায়তা কর্মসূচি নামে রয়েছে সরকারের একটি বিশেষ কার্যক্রম। মহিলাবিষয়ক অধিদফতরের প্রধান কার্যালয়ে ১৯৮৬ সালে নির্যাতিত নারীদের আইনগত পরামর্শ ও সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে ১৫ আইন কর্মকর্তার সমন্বয়ে চারটি পদ নিয়ে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সেলের কার্যক্রম শুরু হয়। 

এ কার্যক্রমকে আরও শক্তিশালী ও বেগবান করতে মহিলা সহায়তা কর্মসূচি নামে একটি উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয় এবং বিভাগীয় শহরে ছয়টি সহায়তা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। দুস্থ নারীকে বিচার পেতে সাহায্য করাই শুধু নয়, বরং নিরাপদ আশ্রয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তির মাধ্যমে স্বাবলম্বী করতে নির্যাতিত মহিলা ও তাদের অভিভাবকদের যেকোনো সহায়তা দিচ্ছে ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও সিলেটের মহিলা কর্মসূচি।

মহিলাবিষয়ক অধিদফতরের আওতায় বিভাগীয় পর্যায়ে সম্পূর্ণ বিনা খরচে নির্যাতিত নারীকে আইনগত সহায়তা দেওয়া হয় এবং প্রয়োজনে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকার ব্যবস্থা করা হয়। তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সেলে নিয়োজিত ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ পরিদর্শক, আইনজীবী ও সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা আইনগত পরামর্শ দেন। পারিবারিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপন, যৌতুকের কারণে সৃষ্ট পারিবারিক সমস্যা নিরসন, স্ত্রী-সন্তানের আইনগত অধিকার প্রতিষ্ঠা, বিয়েবিচ্ছেদ কিংবা তালাকপ্রাপ্ত নারীদের মোহরানা ও খোরপোশ আদায় প্রভৃতি বিষয়ে অভিযোগকারীর লিখিত আবেদনের ভিত্তিতে আপস নিষ্পত্তি করা হয়। এ ক্ষেত্রে বাদী ও বিবাদী উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে পারস্পরিক আলোচনা ও মতবিনিময়ের মাধ্যমে সেল বিষয়গুলো আপস নিষ্পত্তি করে থাকে। 

যেসব অভিযোগ আলোচনায় নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয় না, তা বিনা খরচে এ কার্যালয়ের আইনজীবীর মাধ্যমে নির্যাতিতের পক্ষে আদালতে মামলা পরিচালনা ও নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করা হয়। তাছাড়া নির্যাতিত ও আশ্রয়হীন নারীরা বিনা খরচে ছয় মাস পর্যন্ত ১২ বছরের নিচে সর্বোচ্চ দুই সন্তানসহ আশ্রয় পেতে পারেন। আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিত নারী ও শিশুদের বিনা মূল্যে খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা ও প্রাথমিক শিক্ষা দেওয়া হয়। অসহায় ও দুস্থ মহিলারা যাতে স্বাবলম্বী হতে পারে, সেজন্য আশ্রয়কেন্দ্রের ট্রেড প্রশিক্ষকের মাধ্যমে সেলাই, কাটিং, এমব্রয়ডারি, উল বুনন প্রভৃতি বিষয়ে বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। বাজেট থাকা সাপেক্ষে প্রশিক্ষণ শেষে সেলাই মেশিনও দেয়া হয়। এখান থেকে অর্জিত জ্ঞান কাজে লাগিয়ে পরবর্তীকালে নারীরা আত্মকর্মসংস্থানে নিয়োজিত হতে পারেন।

মহিলা সহায়তা কর্মসূচির কার্যক্রম সত্যিকার অর্থেই, মহিলা সহায়তা কর্মসূচি বর্তমান সরকারের স্লোগান "শেখ হাসিনার বারতা নারী পুরুষ সমতা" প্রতিষ্ঠায় সংকল্পবদ্ধ।

আই নিউজ/এইচএ 

Green Tea
সিলেট বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়