নিজস্ব প্রতিবেদক
চা বাগানে মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলন
লাগাতার কর্মসূচি-ধর্মঘটে প্রায় অচল কমলগঞ্জের ২২টি চা বাগান
প্রতিটি চা বাগানের শ্রমিকরা তাদের নায্য অধিকার আদায়ে ফুঁসে উঠেছে
মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে কয়েকদিন ধরে লাগাতার বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছেন দেশের দুইশো'র অধিক চা বাগানের শ্রমিকরা। গত মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) ২ ঘণ্টা কর্মবিরতির মধ্যে দিয়ে তাদের এ আন্দোলন শুরু হলেও তিনদিনের মাথায় সারাদেশের চা বাগানগুলোতে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন চা শ্রমিকরা। মৌলভীবাজারের শমসেরনগর, কমলগঞ্জের বাগানগুলোতে কোথাও কোথাও সড়ক অবরোধ করে চলছে ধর্মঘট পালন। ফলে প্রায় অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে কমলগঞ্জের ২২টি চা বাগানে।
শনিবার (১৩ আগস্ট) বাগানগুলো পরিদর্শনকালে এই চিত্র চোখে পড়ে আইনিউজ প্রতিবেদকের। চা শ্রমিক নেতারা বলছেন যতোদিন না তাদের মজুরি বাড়িয়ে সর্বনিম্ন ৩০০ টাকা করা হবে ততোদিন ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে।
এর আগে চা বাগানের সব কাজ বন্ধ করে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ করাসহ বিভিন্ন জায়গায় রাস্থাঘাটে অবস্থান নেয়ার জন্য প্রতিটি চা বাগানের শ্রমিকদের আহবান করেছেন তারা।
মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) মৌলভীবাজার, শ্রীমঙ্গল, শমসেরনগরের চা বাগানসহ দেশের ৪০টিরও বেশি বাগানে দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করেন চা শ্রমিকরা। পরে শুক্রবারও শুক্রবারও (১২ আগস্ট) দেশের সব চা বাগানে কর্মবিরতি পালন করেন তারা।
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে সমাবেশ চলাকালে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও বালিশিরা ভ্যালী সভাপতি বিজয় হাজরা বলেন, আজ কর্মবিরতির ৪র্থ দিন। আমরা বিভিন্ন চা বাগানে গিয়ে শ্রমিকদের সাথে কথা বলেছি। প্রতিটি চা বাগানের শ্রমিকরা তাদের নায্য অধিকার আদায়ে ফুঁসে উঠেছে। শ্রমিকরা মজুরি না বাড়লে কাল থেকে কাজে যোগ দিবে না। প্রয়োজনে জীবন দিবে। এই দাসত্ব জীবনে তাদের অনেক কষ্ট মালিক পক্ষের থেকে আমরা মজুরি বৃদ্ধির ব্যাপারে কোন আশ্বাস পাইনি।
তিনি বলেন, সারা দেশের চট্রগ্রাম সিলেট সব জায়গায় শ্রমিকরা প্রস্তুত। আগামীকাল আমরা ধর্মঘটে নামবো। সব বাগানে কাজ বন্ধ থাকবে। কাছাকাছি বাগানগুলো একত্রিত হয়ে আন্দোলনে নামবে। প্রয়োজনে সড়ক অবরোধ করা হবে। মালিক পক্ষের টালবাহানা আর আমরা মানবো না। এখন শ্রমিকদের আন্দোলন কেউ ঠেকাতে পারবেনা।
সমাবেশে আসা নারী চা শ্রমিক রিনা কালিন্দী বলেন, আমরা এত কষ্ট করে কাজ করি কিন্তু আমাদের নায্য মজুরি দেয়া হয় না। বাড়িতে দুই ছেলে এক মেয়ে, স্বামী রয়েছে। আমার একার রুজি দিয়ে সংসার চালাই। রেশন বাবদ ৩ কেজি আটা পাই, চাল ডাল তেল মসলা অন্যান্য জিনিস কিনতে হয়, ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ আছে, অসুখ হলে চিকিৎসা করাতে হয়, প্রতিদিনই জিনিসের দাম বাড়ছে। কিন্তু আমাদের মজুরি বাড়ছে না। আমরা ৩০০ টাকা মজুরি না পেলে কাজ করবো না।
নারী চা শ্রমিক তারামন বলেন, আমরা রোদে পূড়ে বৃষ্টিতে ভিজে কাজ করি। আমাদের দাবী জানানোর আগেই বাগান মালিকদের উচিত আমাদের খোজ খবর নিয়ে সুযোগ সুবিধা দিতো। আমরা কাজ ফেলে কেন আন্দোলন করবো। দুই বছর আগে যে জিনিস ১০০ টাকায় পাওয়া যেতো এখন সেটা ২০০ টাকা। আমাদের তো আলাদা কোন রোজীর ব্যবস্থা নাই। এটা তো বাগান মালিকরা জানে। আমরা ছেলেমেদের আশা পুরন করতে পারি না। ভালো জামাকাপড় কিনে দিতে পারি না। যখন ছেলে মেয়ে এসে বলে অমুক ভালো জামা পড়েছে আমাকে কিনে দেও, তখন মনের ভিতর আঘাত পাই। ছেলেমেয়েদের জীবন আমাদের কষ্টের জীবনের সাথে মিশে গেছে। আমরা আন্দোলন করছি। দাবী আদায় না হলে রাস্তায় রক্ত দিবো। যদি শ্রমিক ইউনিয়নও আন্দোলন বন্ধ করার কথা বলে, আমরা মানবো না।
- প্রায় প্রতিদিন ২০০ কোটি টাকার স্বর্ণ চোরাচালান হচ্ছে!
- মুক্তানগর রিসোর্টে নারীদের সুইমিংপুলে প্রবেশের চেষ্টা, ফাঁকা গুলি
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সহ সভাপতি পংকজ কন্দ তার বক্তব্যে বলেন, মজুরি বৃদ্ধির দাবীতে আমরা ৪ দিন ধরে দুইঘন্টা করে কর্মবিরতি করে আসছি। মালিক পক্ষ থেকে কোন সারা আসে নি, তাদের টনক নড়ে নি। দুই ঘন্টা কর্মবিরতি শেষে প্রতিদিনই শ্রমিকরা বাগানের সব কাজ করছেন। চা বাগানের ভরা মৌসুমে বাড়তি সময় দিয়ে পাতা তুলছেন, যেন আন্দোলনের ফলে চা শিল্পের কোন ক্ষতি না হয়। এটা চা বাগানের প্রতি আমাদের ভালোবাসা। কিন্তু মালিকপক্ষ যদি মনে করে এই ভালোবাসা আমাদের দুর্বলতা, তাহলে তারা ভুল করবে। গত ৪ দিন আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি দিয়েছি। আজ বিকালের মধ্যে সমাধান না পেলে আমরা আগামীকাল থেকে কঠোর আন্দোলনে নামবো।
তিনি বলেন, চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা দেয়ার জন্য আমরা দুই বছর আগ থেকে দাবী জানিয়ে আসছি। কিন্তু ১৯ মাস গত হয়ে গেলেও দ্বিপাক্ষিক চুক্তি অনুযায়ী না গিয়ে মালিক পক্ষ মজুরি বৃদ্ধির ব্যাপারে গড়িমসি করছে। তারা মাত্র ১৪ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। এই দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত উর্ধগতির বাজারে মাত্র ১৪ টাকা দিয়ে শ্রমিকদের আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না।
এদিকে দিনব্যাপী ধর্মঘট এবং চা শ্রমিকদের গত কয়েকদিনের কর্মসূচি, ধর্মঘটের কারণে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে কমলগঞ্জের চা বাগানগুলোতে। কাজ পড়ে থাকলেও দাবি ছেড়ে কাজে যোগ দিচ্ছেন না চা শ্রমিকরা। একরকম অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে এসব বাগানে।
আইনিউজ/এইচএ
আইনিউজে আরও পড়ুন-
- যাত্রাপালার শিল্পী ও দর্শক-শ্রোতা : অতীত থেকে বর্তমান
- বাবু ফকিরের আশ্রম, গান শিখলে ফাউ মিলে মুড়ি, শিঙারা
- এ পি জে আব্দুল কালাম: ‘দ্য মিসাইল ম্যান অফ ইন্ডিয়া’
বিশ্বের মজার মজার গল্প আর তথ্য সম্বলিত আইনিউজের ফিচার পড়তে এখানে ক্লিক করুন
দেখুন আইনিউজের ভিডিও গ্যালারি
দিনমজুর বাবার ছেলে মাহির বুয়েটে পড়ার সুযোগ || BUET success story of Mahfujur Rhaman || EYE NEWS
হানিফ সংকেত যেভাবে কিংবদন্তি উপস্থাপক হলেন | Biography | hanif sanket life documentary | EYE NEWS
আশ্চর্য এন্টার্কটিকা মহাদেশের অজানা তথ্য | Antarctica continent countries | facts। Eye News
- মেয়ের বাড়িতে ইফতার: সিলেটি প্রথার বিলুপ্তি চায় নতুন প্রজন্ম
- অবশেষে ক্লাস করার অনুমতি পেল শ্রীমঙ্গলের শিশু শিক্ষার্থী নাঈম
- দেশের চতুর্থ ধনী বিভাগ সিলেট
- শ্রীমঙ্গল টু কাতারে গড়ে তুলেছেন শক্তিশালি নেটওয়ার্ক
মৌলভীবাজারে অনলাইন জুয়ায় রাতারাতি কোটিপতি সাগর - এসএসসির ফলাফলে বিভাগে ৩য় স্থানে মৌলভীবাজার
- বিজ্ঞাপন
মৌলভীবাজারে হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসায় লাইফ লাইন হাসপাতাল (ভিডিও) - মৌলভীবাজারে ট্যুরিস্ট বাসের উদ্বোধন বৃহস্পতিবার
- ১ ঘন্টার জন্য মৌলভীবাজারে শিশু কর্মকর্তা হলেন তুলনা ধর তুষ্টি
- মৌলভীবাজার শহরে একদিনে ৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত
- বন্ধ থাকবে মৌলভীবাজারের ‘এমবি’