সাহিত্য প্রতিবেদক
সৈয়দ মুজতবা আলী`র বড়বাবু: কে বড় পণ্ডিত
সৈয়দ মুজতবা আলী`র বড়বাবু: কে বড় পণ্ডিত
১.
বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথের চেয়ে বড় পণ্ডিত কেউ ছিলেন কি তাঁর সময়ে? এই প্রশ্নটি নিয়ে আমরা বিতর্ক করতেই পারি। বড় বড় মানুষদের নিয়ে কালে কালে তর্ক-বিরোধ হয়েছে। কিন্তু, আমরা যাদেরকে বড় পণ্ডিত হিসেবে স্বীকার করে নিই তাঁরাও মাঝে মাঝে জানান, তাঁদের দৃষ্টিতে কে বড় পণ্ডিত। তেমনি রবীন্দ্রনাথের চেয়ে তাঁর সময়ে বড় পণ্ডিত কেউ ছিলেন কি-না এই দুষ্কর প্রশ্নের সরল উত্তর পাওয়া যাবে বিশ্বকবির মুখেই।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজের থেকেও বড় পণ্ডিতের সন্ধান পেয়েছিলেন এই অখণ্ড বঙ্গদেশেই। বলতে গেলে তাঁর ঘরের লোক, রক্তের মানুষ, গুরুজন। আজীবন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সেই মানুষটিকে কাছে থেকে দেখেছেন। তিনি রবীন্দ্রনাথের বড় ভাই দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর। সেসময় অনেক বিজ্ঞজনই এটা মান্য করতেন যে, দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো পণ্ডিত এই ভূ-রাতে দুটো মিলা কষ্টসাধ্য।
আশ্চর্য মানুষ ছিলেন ঈর্ষণীয় প্রতিভাবান এই দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর। কিন্তু, সারাজীবন তিনি ছিলেন ঠাকুর পরিবারের রহস্যপুরুষ। একদিকে যেমন দর্শন, বিজ্ঞান, সাংখ্যদর্শন নিয়ে, পাশ্চাত্য দর্শন ছিল তাঁর নখদর্পনে। অন্যদিকে তেমনি তাঁর দিন শুরু হতো একজন পুরোদস্তুর সন্ন্যাসীর মতো। তিনি নাকি সূর্যোদয়ের আগেই ঘুম থেকে ওঠে আগের দিনের বাসি জল পানি দিয়ে স্নান সেরে ধ্যানে বসতেন। এসময় তাঁর শরীরে এসে ছোট ছোট পাখি, কাঠবিড়ালি উঠে যেতো। তিনি ধ্যান ভাঙতেন না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে যেতো। পাখিরা অপেক্ষা করত, ধ্যান ভাঙলে পরে দ্বিজেন্দ্রনাথ পাখিদের বানিয়ে রাখা ময়দার গুলি খাওয়াতেন।
সৈয়দ সাহেবের (সৈয়দ মুজতবা আলী) লেখা থেকে রবীন্দ্রনাথ এবং দ্বিজেন্দ্রনাথ এই দুই ভাই সম্পর্কে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানা যায়। সেই সঙ্গে দ্বিজেন্দ্রনাথ বাবুর অগাধ পাণ্ডিত্যের কিঞ্চিত সুভাসও পাওয়া যায় লেখায় (বই: বড়বাবু।)। এই বইয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করা সৈয়দ সাহেব নিজেও দ্বিজেন্দ্রনাথ সম্পর্কে লিখেছেন: 'আমি এ জীবনে দুটো মুক্ত পুরুষ দেখেছি; তাঁর একজন দ্বিজেন্দ্রনাথ।' আর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একবার সৈয়দ সাহেবদের বলেছিলেন: তিনি জীবনে দুটো পণ্ডিত দেখেছেন। একজন রাজেন্দ্রলাল মিত্র আর তাঁর বড়দাদা (দ্বিজেন্দ্রনাথ)।
দ্বিজেন্দ্রনাথ বিজ্ঞান ও দর্শনের চর্চা করেছেন সারাজীবন। গণিতে ছিল অগাধ জ্ঞান। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ তো একবার বড় ভাইয়ের এই গণিত চর্চা বিদেশে প্রকাশ করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু, দ্বিজেন্দ্রনাথ বাবু নাকি বিশেষ গা-করেননি। বরং, বড় ভাইয়ের মতো রবীন্দ্রনাথকে নিজের কাজ করার উপদেস দিয়েছিলেন।
আশ্চর্য মানুষ ছিলেন ঈর্ষণীয় প্রতিভাবান এই দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর। কিন্তু, সারাজীবন তিনি ছিলেন ঠাকুর পরিবারের রহস্যপুরুষ। একদিকে যেমন দর্শন, বিজ্ঞান, সাংখ্যদর্শন নিয়ে, পাশ্চাত্য দর্শন ছিল তাঁর নখদর্পনে। অন্যদিকে তেমনি তাঁর দিন শুরু হতো একজন পুরোদস্তুর সন্ন্যাসীর মতো। তিনি নাকি সূর্যোদয়ের আগেই ঘুম থেকে ওঠে আগের দিনের বাসি জল পানি দিয়ে স্নান সেরে ধ্যানে বসতেন। এসময় তাঁর শরীরে এসে ছোট ছোট পাখি, কাঠবিড়ালি উঠে যেতো। তিনি ধ্যান ভাঙতেন না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে যেতো। পাখিরা অপেক্ষা করত, ধ্যান ভাঙলে পরে দ্বিজেন্দ্রনাথ পাখিদের বানিয়ে রাখা ময়দার গুলি খাওয়াতেন। তিনি প্রতিদিন পাখির জন্য এ ব্যবস্থা করে রাখতেন।
২.
এইসব তথ্যই পেয়েছি সৈয়দ সাহেবের বড়বাবু বইটি পড়ে। বইটির নাম 'বড়বাবু' সম্ভবত দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কারণে রাখা হয়েছে। কিন্তু, বইটিতে ঠাকুর পরিবারের এই দুই ভাই ছাড়াও আরও গুরুত্বপূর্ণ এবং তথ্যবহুল মজাদার লেখা আছে। এর কোনোটা গল্পের মতো আবার কোনোটা প্রবন্ধের আকারে। তবে, যাই হোক সৈয়দ সাহেবের লেখা মানেই পাঠককে আটকে রাখার মতো মশলা তিনি মেশান। এই বইয়েও তা আছে।
তবে বইয়ের ভূমিকায় রবীন্দ্রোত্তর কালের বাংলা ভাষার লেখক পরিমল গোস্বামীর কিছু সমালোচনা পড়ে ভালো লেগেছে। দেখলাম, পরিমল বাবু লেখায় কোথায় কোথায় সৈয়দ সাহেব ভুল করেছেন তিনি তা ধরিয়ে দিয়েছেন ভূমিকায়। কিছু শব্দের অসঙ্গতি, কিছু তথ্যের অস্পষ্টতা। আবার একইসঙ্গে সৈয়দ সাহেবের লেখনীর যে মুন্সিয়ানা সেটার তারিফও করেছেন পরিমল গোস্বামী।
আমাদের আজকালকার দিনের লেখকদের কথা ভাবুন। ভুল ধরিয়ে দেওয়া তো দূরকি বাত লেখার সমালোচনা করলেই ত্রাহিত্রাহি অবস্থার অবতারণা হয়। ভুল হলে সেটি স্বীকার করে নেয়ার সৎ সাহস যাদের নেই তাঁরা অন্তিমে ভুলেরই খেসারত দেন। হয়তো সেটি বুঝতে পারেন না অজ্ঞতার খাতিরে।
- লেখক- শ্যামলাল গোসাঁই, কবি ও সংস্কৃতিকর্মী
- কবি- শ্যমলাল গোসাঁই, জন্ম ১৯৯৭ সালে এপ্রিল মাসের এক শুক্রবার রাতে। সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার হাওর বিধৌত ধীতপুর গ্রামে। যেখানে চারদিকে হাত বাড়ায় হাওরের অথৈ জলরাশি, সকালে পা স্পর্শ করে সর্পের মতো এঁকেবেঁকে চলে যায় কালনী নদী। দাদী আদর করে নাম রেখেছিলেন হেলাল আহমেদ। লেখালেখি ও গান বাজনা করেন শ্যামলাল গোসাঁই নামে।
- কৃপার শাস্ত্রের অর্থভেদ: বাঙলা ভাষার প্রথম বই
- জীবনানন্দ দাশের কবিতা: বৃক্ষ-পুষ্প-গুল্ম-লতা (শেষ পর্ব)
- জীবনানন্দ দাশের কবিতার পাখিরা
- দুঃখের নাগর কবি হেলাল হাফিজ
- সমরেশ মজুমদার এবং ২টি কবিতা
- সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ৯ দিনব্যাপী অমর একুশের অনুষ্ঠানমালা
- মাকে নিয়ে লিখা বিখ্যাত পঞ্চকবির কবিতা
- হ্যারিসন রোডের আলো আঁধারি
- পিকলু প্রিয়’র ‘কবিতা যোনি’
- গল্পে গল্পে মহাকাশ
মেজোমামা খুব বোকা